Numeral system

সংখ্যা পদ্ধতি

ভেবে দেখো তো সংখ্যা ছাড়া এক পৃথিবীর কথা। ধরো তোমার কাছে দশটা কলম আছে, কিন্তু সংখ্যা ছাড়া সেটা কীভাবে প্রকাশ করবে? হয়তো বলবে তোমার কাছে কিছু কলম আছে বা অনেক কলম আছে, কিন্তু কয়টি কলম আছে সেটা বলতে পারবে না। আবার যদি বলতে চাও তোমার বাসা থেকে স্কুল কত দূরে, তখনও নির্দিষ্ট দূরত্ব না বুঝিয়ে বলতে হবে অনেক দূরে বা বেশি দূরে না। অর্থাৎ সংখ্যা ছাড়া বিশ্বে অনেক কিছুই নির্দিষ্ট ভাবে প্রকাশ করা সম্ভব না। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছো এই সংখ্যা আসলো কীভাবে? কারাই বা আজকের শূন্য থেকে নয় দশটি অংক নিয়ে আসলো? চলো জেনে নেই সেই ইতিহাস। 

ইতিহাস 

অনেক বছর আগের কথা, যখন পুরো পৃথিবীতে শিকার করে খাবার সংগ্রহ করা এবং বেঁচে থাকাটাই ছিল মূল বিষয়। তখন মানুষ শুধু শিকার করে নিয়ে আসতো, কয়টি শিকার করতো বা কত দূরে যেয়ে শিকার করতো, সেটা জানার কোনোই দরকার ছিল না। কিন্তু তারা একটা সমস্যার সম্মুখীন হলো। সমস্যা বাধলো যখন অন্য কাউকে সে শিকারের যোগ্য প্রাণির সংখ্যা বলতে গেলো। তারা তো সংখ্যা জানে না, কীভাবে বলবে! এই সমস্যার সমাধান হিসেবেই সংখ্যার সূত্রপাত। অনেকে মনে করেন হাতের আঙ্গুল দিয়েই প্রথমে তারা গণনা শুরু করেন। এভাবে তো আর দশের বেশি সংখ্যা চিন্তা করা সম্ভব না। এজন্য শুরু হলো ট্যালি করে বা দাগ দিয়ে গণনা করা। এক থেকে চারের জন্য চারটি দাগ দেওয়া হতো, আর পাঁচের জন্য কোনাকুনিভাবে একটি দাগ দিয়ে কেটে বোঝানো হতো। এভাবেই অনেক বড় সংখ্যা প্রকাশ করা সমস্যার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছিলো। এরপর তারা চিন্তা করলো অনেকগুলো পাথর দিয়ে সংখ্যা বুঝাই। যদি পাথর বেশি হয় তখন বড় কোনো সংখ্যা বুঝাবে, আর পাথর কম হলে কোনো ছোট সংখ্যাকে নির্দেশ করবে। এভাবেও বড় সংখ্যা প্রকাশ করা সমস্যার হয়ে যাচ্ছিলো। এরপর আসে হায়ারোগ্লিফিক সংখ্যা যেখানে, বড় সংখ্যাগুলোকে বিভিন্ন চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করা শুরু হয়। এভাবে বড় সংখ্যা চিহ্নের মাধ্যমে প্রকাশ করা যেতো। কিন্তু সমস্যা বাধলো এতোগুলো চিহ্ন মনে রেখে তো আর সহজে সংখ্যার দুনিয়ায় ডুব দেওয়া যাবে না।

এবার আবির্ভাব হয় রোমান সংখ্যার যেখানে বড় বড় সংখ্যার জন্য একই অক্ষর বার বার ব্যবহার করা হতো। এভাবেও অনেক বড় সংখ্যাগুলো প্রকাশ করে অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তো। যার সমাধান নিয়ে আসে ভারতীয় গণিতবিদরা। ভারতীয় গণিতবীদ আর্যভট্ট এসে শূন্য আবিষ্কার করে সমস্যা সমাধান করে দিলেন এবং ৫ম শতাব্দীতে আর পাই() দিয়ে করলেন বিশ্বজয়। সবশেষে বিখ্যাত আরব গণিতবীদ আল খোয়ারেজমি শূন্য থেকে নয় এই দশটি সংখ্যা লিখিত রূপ প্রচলন করে আলোড়ন ফেলে দেন। 

তাহলে অংকগুলোর ইতিহাস তো জানলে, তাহলে বলো তো সংখ্যা পদ্ধতি কী?

সংখ্যা পদ্ধতি:

বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন বা মৌলিক চিহ্ন বা অঙ্ক ব্যবহার করে সংখ্যা লিখা ও প্রকাশ করার পদ্ধতিকে সংখ্যা পদ্ধতি বলে। এর সাহায্যে সহজেই সংখ্যা গণনা ও প্রকাশ করা যায়। এক কথায়, সংখ্যাকে প্রকাশ করার ও গণনা করার পদ্ধতিকে সংখ্যা পদ্ধতি বলা হয়। তোমরা সবাই স্থানিক সংখ্যা পদ্ধতির সাথে পরিচিত। এ পদ্ধতিতে প্রতিটি চিহ্নের একটি নির্দিষ্ট স্থানিক মান রয়েছে যা নির্ভর করে অঙ্কটি কোন পদ্ধতিতে লেখা হয়েছে তার ওপর। কোন পদ্ধতি লেখা হয়েছে মানে? ধরনের সংখ্যা পদ্ধতি চার ধরনের। যেমন- বাইনারি (Binary) বা দ্বিমিক, অক্টাল (Octal) বা অষ্টমিক, ডেসিমাল (Decimal) বা দশমিক এবং হেক্সাডেসিমাল (Hexadecimal) বা ষোড়দশ।

বিভিন্ন ধরনের সংখ্যা পদ্ধতি:

প্রতিটি সংখ্যা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংকের সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন। যে সংখ্যা পদ্ধতিতে যতগুলো অংক ব্যবহার করা হয়, তার base বা ভিত্তি ততো। যদি কোনো সংখ্যা পদ্ধতিতে চারটি অংক ব্যবহার করে সংখ্যা গঠন করা হতো তাহলে তার ভিত্তি হতো চার। কী কী অংক কোন পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয় এবং তার ভিত্তি কত, তা নিচের টেবিলে উল্লেখ করা আছে,

বিভিন্ন সংখ্যা পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা:

এতো সংখ্যা পদ্ধতি কী দরকার? আমরা তো একটি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করেই সংখ্যাকে প্রকাশ করতে পারতাম, এতো কিছু মনেও রাখতে হতো না! 

মানুষ সাধারণত ডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করলেও, কম্পিউটার কিন্তু ডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি বুঝবে না। তাই কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রামে এবং কম্পিউটারকে বোঝানোর জন্য ডেসিমেল সংখ্যাকে বাইনারি সংখ্যাতে রূপান্তর করতেই হবে। 

কম্পিউটার বাইনারি সংখ্যা সবকিছু বুঝতে পারলেও এতোগুলো বাইনারি ডিজিট একসাথে দেখে বুঝতে পারা অনেক কষ্টসাধ্য বিষয়। এজন্য বাইনারি সংখ্যাকে একটু সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য অক্টাল এবং হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। একসাথে তিনটি বাইনারি ডিজিটের গুচ্ছকে একটি অক্টাল ডিজিট এবং চারটি বাইনারি ডিজিটের গুচ্ছকে একটি হেক্সাডেসিমেল ডিজিটে রূপান্তর করা যায়। 

সংখ্যা এবং সংখ্যা পদ্ধতি আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকলেও আমরা বুঝতে পারি না, হয়তো খেয়ালও করা হয় না। কিন্তু এই সংখ্যা এবং সংখ্যা পদ্ধতি আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে তুলেছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই!

শেয়ার:

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × four =