বায়োইনফরম্যাটিক্স (Bioinformatics)
বর্তমানে এই করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব এর সময়ে, আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, আমরা কিভাবে ভাইরাসের বর্তমান অবস্থা, মিউটেশন এর রূপ, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ইত্যাদি সব ধরনের তথ্য হাতের নাগালেই পাচ্ছি? অথবা সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা কিভাবে একযোগে তাদের করোনাভাইরাস সম্পর্কিত গবেষণা চালিয়ে যেতে পারছে, কিভাবে এত দ্রুত একে অপরের গবেষণালব্ধ ফলাফল ব্যবহার করতে পারছে? এই কাজগুলো সহজ করে দিতে পারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির একটি শাখা, যার নাম বায়োইনফরম্যাটিক্স। চলো তাহলে আজকে বায়োইনফরম্যাটিক্স সম্পর্কে জেনে নেই।
জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, সাজানো, বিশ্লেষণ ইত্যাদি কাজে কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহারকে বায়োইনফরম্যাটিক্স বলে। ধরো, কোনো বিজ্ঞানী করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করবে। আমরা সকলেই জানি গবেষণার জন্য তার তথ্য সংগ্রহ করা কতটা কঠিন কাজ। তার এই কাজ সহজ করে দিতে পারে বায়োইনফরম্যাটিক্স এর সাহায্যে সাহায্যে ঐ বিজ্ঞানীর আগে এই বিষয়ে অন্য বিজ্ঞানীরা কি কি গবেষণা করেছেন, আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ সমূহ, বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে পার্থক্য ইত্যাদি ডেটা সংগ্রহ, সাজানো, ও বিশ্লেষণ করতে পারবে।
বায়োইনফরম্যাটিক্স এমন একটি কৌশল যেখানে ফলিত গণিত, তথ্যবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, কম্পিউটার বিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রসায়ন এবং জৈব রসায়ন ব্যবহার করে জীববিজ্ঞানের সমস্যাসমূহ সমাধান করা হয়। মূলত জীববিজ্ঞানের আণবিক পর্যায়ে গবেষণাই এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়। অর্থ্যাৎ জীব সংক্রান্ত তথ্য ব্যবস্থাপনার কাজে কম্পিউটার প্রযুক্তির প্রয়োগই হলো বায়োইনফরম্যাটিক্স।
বায়োইনফরম্যাটিক্সের উদ্দেশ্য
বায়োইনফরম্যাটিক্স আবিষ্কারের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জৈবিক প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুধাবন করা। যেমন মানুষের খাদ্য গ্রহণ, শ্বসন ইত্যাদি কাজ সঠিকভাবে বুঝার জন্য বায়োইনফরম্যাটিক্স ব্যবহার করতে পারে। এছাড়াও জৈবিক প্রক্রিয়া অনুধাবনে বিভিন্ন ধরনের জটিল হিসাব-নিকাশ করে ধারণা অর্জন করার চেষ্টা চালানো হয়। এই হিসাব নিকাশ করার জন্য কিছু পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় যার মধ্যে রয়েছে প্যাটার্ন রিকোগনিশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অ্যালগরিদম, ডেটা মাইনিং, ইমেজ প্রসেসিং, সিমুলেশন, ডিসক্রিট ম্যাথ, কন্ট্রোল থিওরি, সিস্টেম থিওরি, ভিজুয়ালাইজেশন ইত্যাদি। এছাড়াও বায়োইনফরম্যাটিক্স দিয়ে রোগ হবার কারন জানা, ঔষধের গুণাগুণ উন্নত করা বা নতুন ঔষধ আবিষ্কারের চেষ্টা করা হয়।
বায়োইনফরম্যাটিক্স এর কাজ
- বায়োইনফরম্যাটিক্স প্রধান কাজ হচ্ছে, জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত জ্ঞান ব্যবহার করে, সফটওয়্যার তৈরি করা যা গবেষণায় সাহায্য করে। এসকল সফটওয়্যারে যেসব প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে Java, XML, C, C Plus Plus, C Sharp, Python, SQL, Matlab হলো উল্লেখযোগ্য কিছু ভাষা।
- সিকোয়েন্স আলাইনমেন্ট।
- জিন অনুসন্ধান এবং জিন প্রকাশ সম্বন্ধে ভবিষ্যৎবাণী।
- জিনোম সমন্বয় এবং সমাগম।
- প্রোটিনের অ্যালাইনমেন্ট এবং প্রোটিন- প্রোটিন মিথস্ক্রিয়া।
- প্রোটিনের গঠন এবং জিন প্রকাশ ভবিষ্যৎবাণী।
- ড্রাগ নকশা, আবিষ্কার এবং বিবর্তনের নকশা প্রণয়ন।