chordates

কর্ডাটা (Chordata)

প্রাণিবিদ্যায় বর্ণিত Animalia জীবরাজ্য (Kingdom)-এর একটি পর্ব (phylum) বিশেষ। এই পর্বের ভিতরে রয়েছে মৎস, উভচর, সরীসৃপ, পাখি এবং স্তন্যপায়ী শ্রেণির প্রাণিকূল। এই পর্বের অন্তর্গত প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৪৩,৭০০ হাজার। প্রায় ৫৪.২ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ক্যাম্ব্রিয়ান অধিযুগে কর্ডাটা পর্বের প্রাণীসমূহের আবির্ভাব ঘটেছিল। ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী উইলিয়াম ব্যাটসন {William Bateson (August 8, 1861 – February 8, 1926)} এই নামকরণ করেন।

কেন এরূপ নামকরণ করা হয়েছে?

প্রাণীজগতের যে সকল প্রাণীর পৃষ্ঠ মধ্যরেখা বরাবর দণ্ডাকৃতির স্থিতিস্থাপক অস্থি বা নটোকর্ড (Notochord) থাকে, তাদেরকে কর্ডাটা বলা হয়। গ্রিক Chorda অর্থ রজ্জু। এই নটোকর্ড-এর ভিতর দিয়ে স্নায়ু রজ্জু বিদ্যমান থাকে বলে- এর রূপ নামকরণ করা হয়েছে।

কর্ডাটা পর্বের প্রাণীর বৈশিষ্ট্য:

  • ভ্রূণ অবস্থায় অথবা সারা জীবন পৃষ্ঠ মধ্যরেখা বরাবর নিরেট (Solid), দণ্ডাকৃতির (Rod-shaped) ও স্থিতিস্থাপক (Elastic) নটোকর্ড (Notochord) বর্তমান যা মেরুদণ্ডীদের (Vertebrates) পূর্ণাঙ্গ প্রাণীতে মেরুদণ্ড (Vertebral column) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।
  • নটোকর্ডের (Notochord) পৃষ্ঠদেশ (Dorsal side) বরাবর ফাঁপা ও নলাকার স্নায়ু-রজ্জু (Nerve cord) উপস্থিত। মেরুদণ্ডীদের ক্ষেত্রে এটির অগ্রপ্রান্তে মস্তিষ্ক (Brain) এবং এর পশ্চাতে সুষুম্নাকাণ্ড (Spinal cord) গঠিত হয়।
  • উন্নত কর্ডেট (Higher Chordates) ছাড়া অধিকাংশ প্রাণীতে সারা জীবন অথবা জীবনের যে কোন দশায় গলবিলে পার্শ্বীয়ভাবে কয়েক জোড়া ফুলকা রন্ধ্র (Gill slits) বর্তমান।
  • মেরুদণ্ডীদের অন্তঃকঙ্কাল বিশিষ্ট দু’জোড়া পদ (অগ্রপদ ও পশ্চাৎ পদ) বর্তমান।
  • এন্ডোস্টাইল (Endostyle) উপস্থিত যা পরবর্তীতে থাইরয়েড গ্রন্থিতে (Thyroid glands) রূপান্তরিত হয়।
  • পায়ু (Anus) পরবর্তী পেশীবহুল ও স্থিতিস্থাপক লেজ (Tail) উপস্থিত।
  • উন্নত পরিপাকতন্ত্র পরিপাক গ্রন্থিবিশিষ্ট এবং পাকস্থলী (Stomach) ও অন্ত্র (Intestine) সুস্পষ্টভাবে আলাদা।
  • রক্ত সংবহনতন্ত্র বদ্ধ প্রকৃতির। অঙ্কীয় দিকে অবস্থিত হৃদযন্ত্র, পৃষ্ঠীয় ও অঙ্কীয় রক্তনালী নিয়ে রক্ত সংবহনতন্ত্র গঠিত। হেপাটিক পোর্টাল তন্ত্র (Hepatic portal system) উন্নত প্রকৃতির।
  • জলজ শ্বসন (Aquatic respiration) ফুলকার (Gill) সাহায্যে এবং বায়বীয় শ্বসন (Arial respiration) ফুসফুসের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
  • অধিকাংশ প্রাণীতে কোমলাস্থি (Cartilage) অথবা অস্থি (Bone) নির্মিত কঙ্কাল দৈহিক অবকাঠামো তৈরি করে।
  • বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া সকলেই একলিঙ্গ (Dioecious) প্রাণী।

কর্ডাটা পর্বকে তিনটি উপপর্বে ভাগ করা হয়েছে এবং এই তিনটি উপপর্বকে আবার বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। 

কর্ডাটা (Chordata) পর্বের শ্রেণিবিন্যাস:

গ্রুপ (Group): অ্যাক্রানিয়া বা প্রোটোকর্ডাটা (Acrania or Protochordata)
উপ-পর্ব (Subphylum): ইউরোকর্ডাটা (Urochordata)
শ্রেণি: লার্ভাসিয়া (Larvacea)
শ্রেণি: থ্যালিয়াসিয়া (Thaliacea)
শ্রেণি: অ্যাসিডিয়াসিয়া (Ascidiacea)
উপ-পর্ব (Subphylum): সেফালোকর্ডাটা (Cephalochordata)
গ্রুপ (Group): ক্রানিয়াটা (Craniata)
উপ-পর্ব (Subphylum): ভার্টিব্রাটা (Vertebrata)
বিভাগ (Division): এ্যাগনাথা (Agnatha)
অধি-শ্রেণি (Super class): সাইক্লোস্টোমাটা (Cyclostomata)
শ্রেণি: মিক্সিনি (Myxini)
শ্রেণি: সেফালাসপিডোমরফি (Cephalaspidomorphi)
অধি-শ্রেণি (Super class): ন্যাথোস্টোমাটা (Gnathostomata)
শ্রেণি: কন্ড্রিকথিস (Chondrichthyes)
শ্রেণি: অস্টিকথিস (Osteichthyes) শ্রেণি: অ্যাকটিনোপটেরিজি (Actinopterygii) শ্রেণি: সার্কোপটেরিজি (Sarcopterygii ) শ্রেণি: উভচর (Amphibia)
শ্রেণি: সরীসৃপ (Reptilia)
শ্রেণি: পাখী (Aves)
শ্রেণি স্তন্যপায়ী (Mammalia)

উপ-পর্ব: ইউরোকর্ডাটা (Urochordata)

ইউরোকর্ডাটা উপপর্বের প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য

  • ব্যাঙ্গাচীর মত লার্ভার লেজের দিকে নটোকর্ড (Notochord) বর্তমান কিন্তু পরিণত প্রাণীতে অনুপস্থিত।
  • লার্ভা দশায় এরা মুক্ত সাঁতারু হলেও অধিকাংশ পরিণত প্রাণীই জলে নিমজ্জিত কোন বস্তুর সাথে আটকে থাকে অর্থাৎ পরিণতরা নিশ্চল (Sessile) প্রাণী।
  • দেহ টিউনিক (Tunic) বা টেস্ট (Test) নামক আচ্ছাদনে আবৃত।
  • দেহের মুক্তপ্রান্তে মুখছিদ্র (Oral opening) এবং এর নিকটেই অ্যাট্রিওপোর (Atriopore) বর্তমান।

ইউরোকর্ডাটা উপপর্বের প্রাণীদের ৩টি Class বা শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে।

শ্রেণি: লার্ভাসিয়া (Larvacea)

  • এরা ক্ষুদ্রাকৃতির (Tiny), স্বচ্ছ (Transparent), মুক্ত ভাসমান (Free floating)।
  • দেহাবরণ অস্থায়ী এ জিলেটিনজাত।
  • লেজ বিশিষ্ট লার্ভা দশা উপস্থিত। পরিণত প্রাণীতেও লেজ বর্তমান।
  • ফুলকা ছিদ্র মাত্র এক জোড়া।

শ্রেণি: থ্যালিয়াসিয়া (Thaliacea)

  • এরা মুক্ত সাঁতারু অথবা পেলাজিক টিউনিকেটস (Pelagic Tunicates) অর্থাৎ পানির উপরিস্তরে বসবাসকারী টিউনিকেটস।
  • দেহাবরণ স্থায়ী, পাতলা ও স্বচ্ছ।
  • এদের টিউনিক (Tunic) নামক দেহ আচ্ছাদনে বৃত্তাকার পেশী (Circular muscles) বর্তমান।
  • পরিণত প্রাণীরা লেজ বিহীন।
  • অনেক সময় উপনিবেশ (Colony) গঠন করে অবস্থান করে।
  • উদাহরণ: Salpa maxima

শ্রেণি: অ্যাসিডিয়াসিয়া (Ascidiacea)

  • এরা নিশ্চল (Sessile) প্রাণী।
  • এদের টিউনিক (Tunic) নামক দেহ আচ্ছাদনে বিচ্ছিন্নভাবে পেশী দেখতে পাওয়া যায়।
  • দেহাবরণ স্থায়ী, পুরু ও অর্ধস্বচ্ছ।
  • এরা একাকী (Solitary) বা উপনিবেশ (Colony) গঠন করে থাকে।
  • ফুলকা ছিদ্র অনেক।
  • পরিণত প্রাণীরা লেজ বিহীন।
  • উদাহরণ: Ascidia mentula (অ্যাসিডিয়া)

উপ-পর্ব: সেফালোকর্ডাটা (Cephalochordata) 

Cephalochordata শব্দটি এসেছে গ্রিক ভাষা kephale থেকে যার অর্থ মাথা এবং chorda যার অর্থ রজ্জু থেকে। পৃথিবীর সব উপকূলীয় পানির বালুময় তলদেশে এরা বাস করে। এসব প্রাণীতে কর্ডেটের সবকটি বৈশিষ্ট্যের আদি ও সরল রূপ দেখতে পাওয়া যায়। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ৩৩ প্রজাতির সেফালোকর্ডাটা শনাক্ত করা হয়েছে।

সেফালোকর্ডাটা উপপর্বের প্রাণীর বৈশিষ্ট্য

  • লম্বা, পার্শ্বীয়ভাবে চাপা এবং উভয়প্রান্ত (অগ্র ও পশ্চাৎ) সরু দেহে নটোকর্ড ও নার্ভ-কর্ড অনুদৈর্ঘ্য বরাবর প্রলম্বিত যা সারা জীবন ধরে অবস্থান করে।
  • অগ্রপ্রান্তে ওরাল সিরি (Oral cirri) বিশিষ্ট ওরাল হুড (Oral hood) বর্তমান।
  • মস্তকবিহীন এ প্রাণীদের দেহ ধর (Trunk) ও লেজে (Tail) বিভক্ত।
  • বৃহৎ অ্যাট্রিয়ামে (Atrium) ফুলকা রন্ধ্র উন্মুক্ত।
  • গলবিল এলাকায় অবস্থিত সোলেনোসাইট (Solenocite) বিশিষ্ট নেফ্রিডিয়া রেচনতন্ত্র গঠন করেছে।
  • সমুদ্রের অগভীর পানির বাসিন্দা।
  • উদাহরণ: Branchiostoma lanceolatum (অ্যাম্ফিঅক্সাস)

উপ-পর্ব: ভার্টিব্রাটা (Vertebrata)

[ল্যাটিন শব্দ Vertebratus অর্থ Backbone তথা মেরুদণ্ড]

ভার্টিব্রাটা উপপর্বের প্রাণীদের অস্থিময় বা তরুণাস্থিময় ক্রেনিয়ামের ভিতর মস্তিষ্ক অবস্থান করে বলে এ উপপর্বের আরেক নাম ক্রেনিয়াটা।

ভার্টিব্রাটা(vertebrate) উপপর্বের প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য 

  • নটোকর্ড ((Notochord)) কশেরুকা (Vertebra) বিশিষ্ট মেরুদণ্ড দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।
  • নার্ভ কর্ডের (Nerve cord) অগ্রপ্রান্ত মস্তিষ্ক (Brain) এবং এর পশ্চাতে সুষুম্নাকাণ্ড (Spinal cord) গঠন করে।
  • উন্নত মেরুদণ্ডী (Higher vertebrates) প্রাণীদের কেবলমাত্র ভ্রূণে এবং অন্যান্য প্রাণীদের সারাজীবন গলবিলীয় ফুলকা রন্ধ্র বর্তমান।
  • অন্তঃকঙ্কাল বিশিষ্ট দু’জোড়া (অগ্রপদ ও পশ্চাৎ পদ) পদ বর্তমান।
  • দেহের অঙ্কীয়দেশে (Ventral) অবস্থিত সুগঠিত হৃদপিণ্ড রক্ত সংবহনের কাজ করে।
  • প্রধান রেচনাঙ্গ বৃক্ক (Kidney)।
  • দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম এবং অভ্যন্তরীণ খণ্ডায়ন (Metamerism) বর্তমান।

ভার্টিব্রাটা উপপর্বের প্রাণীদের ২টি অধিশ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এই উপপর্বের দুটি Superclass বা অধিশ্রেণি হলো- সাইক্লোস্টোমাটা এবং ন্যাথোস্টোমাটা। আবার সাইক্লোস্টোমাটা অধিশ্রেণিকে দুই ভাগে এবং ন্যাথোস্টোমাটা অধিশ্রেণিকে সাত ভাগে ভাগ করা হয়েছে। 

অধি-শ্রেণি: সাইক্লোস্টোমাটা (Cyclostomata)

[সাইক্লোস্টোমাটা শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ থেকে। cyclos যার অর্থ round বা গোল।এবং stoma যার অর্থ mouth বা মুখ।]

সাইক্লোস্টোমাটা হলো প্রকৃত চোয়াল ও জোড় উপাঙ্গবিহীন এবং তরুণাস্থিময় জীবিত মৎস্যগোষ্ঠী। এ Superclass এর অধীনে দুধরনের মৎসগোষ্ঠী রয়েছে। মিক্সিনি (Myxini)

 এবং পেট্রোমাইজনটিডা (Petromyzontida)। 

শ্রেণি: মিক্সিনি (Myxini)

[গ্রিক Myxa অর্থ Slime তথা আঠালো উপাদান]

মিক্সিনি শ্রেণিভুক্ত মাছগুলো হ্যাগফিশ নামে পরিচিত এবং দেখতে অনেকটা বাইন মাছের মতো। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় সত্তর প্রজাতির হ্যাগফিশ রয়েছে এবং এদের সবাই সামুদ্রিক।

Myxini-এর বৈশিষ্ট্য:

  • প্রান্তীয় (Terminal) মুখে কয়েকটি দাঁত ও চার জোড়া কর্ষিকা (Tentacle) বর্তমান।
  • মৌখিক ফানেল (Buccal funnel) অনুপস্থিত।
  • নাসাথলি নালির মাধ্যমে গলবিলের (Pharynx) সাথে যুক্ত।
  • পাঁচ থেকে পনের জোড়া গলবিলীয় ফুলকা রন্ধ্র (Gill slits) বর্তমান।
  • উদাহরণ: Myxine glutinosa (হ্যাগফিশ, Hagfishes)

শ্রেণি: পেট্রোমাইজনটিডা(Petromyzontida)

পেট্রোমাইজনটিডা শ্রেণিভুক্ত মাছগুলো ল্যামপ্রে নামে পরিচিত, যারা সবাই সামুদ্রিক হলেও ডিম পারার জন্য মিঠাপানির হ্রদে আসতে হয়। ডিম ছাড়ার পর কয়েক দিনের মধ্যেই এরা মারা যায়। ডিম ফুটে অ্যামোসিট লার্ভা বের হয় এবং রূপান্তর শেষে সমুদ্রে যাত্রা করে।

Petromyzontida-এর বৈশিষ্ট্য:

  • পরিণত ল্যামপ্রের দেহ সরু
  • দেখতে বাইন মাছের মতো, আঁইশবিহীন, কিন্তু একটি বা দুটি পৃষ্ঠীয় পাখনাযুক্ত।
  • মৌখিক চাকতিটি (Oral Disc) চোষকের ভূমিকা পালন করে। এর চারদিকে কেরাটিনময় দাঁত অবস্থান করে। 
  • পৃথক ফুলকা রন্ধ্রসহ সাতজোড়া ফুলকা রয়েছে।
  • ল্যামপ্রের নাসিকা-থলি মুখবিবরে উন্মুক্ত নয়।
  • উদাহরণ: Petromyzon, Lampreys(ল্যাম্প্রে)

অধি-শ্রেণি: ন্যাথোস্টোমাটা (Gnathostomata)

[গ্রিক Gnathos অর্থ Jaw তথা চোয়াল এবং গ্রিক Stoma অর্থ Mouth তথা মুখ]

  • প্রকৃত চোয়াল উপস্থিত।
  • জোড় পাখনা উপস্থিত।
  • অন্তঃকর্ণে অর্ধ বৃত্তাকার নালী (Semi-circular canal) তিনটি।

এসব প্রাণীকে সাতটি Class বা শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমন:

  1. কন্ড্রিকথিস (Chondrichthyes)
  2. অ্যাকটিনোপটেরিজি (Actinopterygii)
  3. সার্কোপটেরিজি (Sarcopterygii)
  4. অ্যাম্ফিবিয়া (Amphibia)
  5. রেপটিলিয়া (Reptilia)
  6. অ্যাভিস (Aves) 
  7. ম্যামালিয়া (Mammalia)

শ্রেণি: কন্ড্রিকথিস (Chondrichthyes)

[গ্রিক শব্দ Chondros অর্থ Cartilage তথা কোমলাস্থি এবং Ichthys অর্থ Fish তথা মাছ] কন্ড্রিকথিস প্রাচীন এবং উন্নত গোষ্ঠী। এদের সুগঠিত সংবেদ অঙ্গ, শক্তিশালী লেজ ও সাঁতার-পেশি রয়েছে। এরা অধিকাংশই সামুদ্রিক এবং শিকারী স্বভাবের হয়ে থাকে।

Chondrichthyes-এর বৈশিষ্ট্য: 

  • দেহ অসংখ্য ক্ষুদ্র প্ল্যাকয়েড (placoid; সূক্ষ্ম কাটার মতো) আঁইশে আবৃত। 
  • অন্তঃকঙ্কাল সম্পূর্ণভাবে তরুণাস্থিময়। 
  • মাথার দুপাশে ৫-৭ জোড়া ফুলকা রন্ধ্র পৃথকভাবে দেহের বাইরে উন্মুক্ত।
  • পুচ্ছ পাখনা হেটারোসার্কাল (heterocercal) ধরনের; অর্থাৎ পুচ্ছ পাখনার অংশ দুটি অসমান। 
  • মুখছিদ্র দাঁতাল ও নাসারন্ধ্র অঙ্কীয়দেশে অবস্থিত।
  • উদাহরণ: sharks

শ্রেণি: অ্যাকটিনোপটেরিজি (Actinopterygii)

অ্যাকটিনোপটেরিজি শ্রেণিভুক্ত মাছগুলো রশ্মিময় পাখনাবিশিষ্ট মাছ বা রে-ফিন্ড ফিশেস নামে পরিচিত। জীবিত মাছের প্রায় ছিয়ানব্বই পারসেন্ট এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। 

Actinopterygii-এর বৈশিষ্ট্য: 

  • ত্বক গ্রন্থিময় এবং সাধারণত সাইক্লয়েড (Cycloid; গোলাকার) বা টিনয়েড (Ptenoid; কাঁটাযুক্ত) ধরনের আঁইশে আবৃত। 
  • কিছু ক্ষেত্রে আঁইশ নেই। 
  • এসব মাছের অন্তঃকঙ্কাল অস্থিময় ।
  • মাথার দুপাশে একটি করে ফুলকা রন্ধ্র অবস্থিত যা কানকো (Operculum) দিয়ে আবৃত। 
  • পৌচ্ছিক-পাখনা হোমোসার্কাল (Homocercal) ধরনের অর্থাৎ পুচ্ছপাখনার অংশদুটি সমান এবং রশ্মিযুক্ত।
  • অনেক প্রজাতিতে বায়ুথলি বা পটকা (Swim Bladder) থাকে যা দেহকে পানিতে ভেসে থাকতে সাহায্য করে।
  • উদাহরণ: Alchetron

শ্রেণি: সার্কোপটেরিজি (Sarcopterygii)

সার্কোপটেরিজি শ্রেণিভুক্ত মাছকে পিণ্ডাকার পাখনাবিশিষ্ট মাছ বা লোব ফিন্ড ফিশেস  বলে। বর্তমানে মাত্র আট প্রজাতির মাছ জীবিত আছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এ শ্রেণিরই কোনো মাছ থেকে চতুষ্পদী ও স্থলচর প্রাণী হিসেবে উভচর গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছে।

Sarcopterygii-এর বৈশিষ্ট্য:

  • এদের দেহ গ্যানয়েড ধরনের আঁইশে আবৃত এবং অন্তঃকঙ্কাল অস্থিময়।
  • মাথার দুপাশে একটি করে ফুলকা রন্ধ্র থাকে যা কানকো দিয়ে আবৃত।
  • এদের পটকা (Swim Bladder) রক্তজালিকা-সমৃদ্ধ এবং শ্বসন ও ভেসে থাকতে সাহায্য করে।
  • এসব প্রাণীর লেজ ডাইফিসার্কাল ধরনের অর্থাৎ পুচ্ছ পাখনার অংশ দুটি একীভূত হয়ে অভিন্ন ও নমনীয় পাখনা হিসেবে লেজ ঘিরে অবস্থিত।

শ্রেণি: অ্যাম্ফিবিয়া (Amphibia)

অ্যাম্ফিবিয়া শ্রেণির প্রাণীরা প্রথম স্থলচর এবং মেরুদণ্ডী প্রাণী। মূলত স্থলচর হলেও জননকালে ডিম পাড়তে এরা পানিতে আসতে বাধ্য হয়। মেরু অঞ্চলসহ পৃথিবীর প্রায় সব বসবাসযোগ্য স্থানেই উভচর পাওয়া যায়। 

Amphibia-এর বৈশিষ্ট্য:

  • জীবনচক্র সম্পন্ন করতে জল (লার্ভা দশা) ও স্থল (পরিণত প্রাণী) উভয় পরিবেশে অতিবাহিত করা আবশ্যক। 
  • প্রধান শ্বসন অঙ্গ লার্ভা দশায় ফুলকা এবং পরিণত প্রাণীতে ফুসফুস। বিশেষ অবস্থায় ত্বক ও মুখগহ্বরের শ্লেষ্মা-ঝিল্লিও শ্বসনে অংশ নেয়।
  • দু’জোড়া পদের মধ্যে অগ্রপদের প্রতিটিতে চারটি করে এবং পশ্চাৎ পদের প্রতিটিতে পাঁচটি করে নখর বা নখবিহীন আঙ্গুল বর্তমান।
  • গ্রন্থিময় নগ্ন ত্বক আর্দ্র প্রকৃতির এবং কোনো বহিঃআঁইশ দেখতে পাওয়া যায় না।
  • হৃদপিণ্ড তিন প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট, যথা- দুটি অলিন্দ (Atrium) ও একটি নিলয় (Ventricle)।
  • গ্রীবা (Neck) অস্পষ্ট এবং কর্ণপটহ (Pinna) উপস্থিত।
  • উদাহরণ: Rana tigrina (সোনা ব্যাঙ), Salamandra salamandra (স্যালামান্ডারা)

শ্রেণি: সরীসৃপ বা রেপটাইলিয়া (Reptilia)

মেরুদণ্ডী প্রাণিদের মধ্যে সরিসৃপই প্রথম পূর্ণ বিকশিত স্থলচর প্রাণি। শুষ্কতা, পানি ধরে রাখা, স্থলে বিচরণ, রক্তসংবহনজনিত সমস্ত বাধা অতিক্রম করে সরিসৃপরা পৃথিবীর সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বুকের ওপর ভর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে চলে।

Reptilia-এর বৈশিষ্ট্য:

  • শুষ্ক ত্বক এপিডার্মাল শৃঙ্গায়িত আঁইশে (Epidermal horny scales) আবৃত। অনেক সময় এই আঁইশ শক্ত হয়ে স্কিউট (Scute), চূড়া (Crest) কাঁটা (Spine), খোলক / বর্ম (Shell), অস্থিময় পাত (Bony plate) ইত্যাদি গঠন করে।
  • দু’জোড়া শক্তিশালী পদের প্রতিটিতে পাঁচটি করে নখরবিশিষ্ট আঙ্গুল বর্তমান।
  • শীতল-রক্ত (Cold blooded) বিশিষ্ট এ প্রাণীদের প্রধান শ্বসনাঙ্গ ফুসফুস।
  • কুমীরজাতীয় প্রাণী ছাড়া অন্যান্যদের হৃদপিণ্ড অসম্পূর্ণভাবে চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট।
  • অবসারণী ছিদ্র (Cloacal aperture) আড়াআড়িভাবে অবস্থিত।
  • বেশিরভাগ প্রাণীতে লেজ বর্তমান।
  • অধিকাংশই স্থলচর, কিছু জলচর।
  • উদাহরণ: Hemidactylus brooki (টিকটিকি), Chrysemys picta (কচ্ছপ), Crocodylus palustris (কুমির), Naja naja (গোখরা)

শ্রেণি: পাখি বা এভিস (Aves)

অ্যাভিস শ্রেণীভূক্ত প্রাণীদের পাখি বলা হয়। বর্তমানে পৃথিবীতে দশ হাজারের বেশি প্রজাতির পাখি রয়েছে।

Aves-এর বৈশিষ্ট্য: 

  • দেহ পালকে (Feather) আবৃত।
  • অস্থি নিউম্যাটিক (Pneumatic) প্রকৃতির অর্থাৎ স্পঞ্জি (Spongy) বা বাতাসে পূর্ণ।
  • দেহাভ্যন্তরে বায়ুথলী (Air sac) বর্তমান যা দেহকে হালকা করতে সাহায্য করে।
  • পশ্চাৎ পদ পায়ে এবং অগ্রপদ  ডানায় (Wing) রূপান্তরিত হয়েছে যার বেশিরভাগই উড়ার উপযোগী।
  • বক্ষে উড্ডয়ন পেশি (Flight muscles) বর্তমান।
  • চোয়ালের সম্মুখ প্রান্ত প্রলম্বিত হয়ে চঞ্চুতে (Beak) পরিণত হয়েছে এবং চোয়াল ও চঞ্চুতে কোন প্রকার দাঁত থাকে না।
  • উষ্ণ-রক্ত (warm-blooded) বিশিষ্ট এ প্রাণীরা শ্বসনাঙ্গ ফুসফুস এবং হৃদযন্ত্র চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট।
  • উদাহরণ: Passer domesticus (চড়ুই) Copsychus saularis (দোয়েল)

শ্রেণি: স্তন্যপায়ী বা ম্যামালিয়া (Mammalia) 

ম্যামালিয়া বা স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বিবর্তনের দিক থেকে সবচেয়ে আধুনিক প্রাণী। আমরা মানুষেরাও এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।

Mammalia-এর বৈশিষ্ট্য:

  • দেহত্বক লোম (Hair) দ্বারা আবৃত এবং গ্রন্থিময়।
  • স্তন-গ্রন্থি (Mammary gland) বর্তমান যা কেবলমাত্র পরিণত স্ত্রী প্রাণীতে স্তন্যদানকালে কার্যকর থাকে তথা দুগ্ধ নিঃসরণ করে।
  • উন্নত মস্তিষ্কে কর্পাস ক্যালোসাম (Corpus callosum) বর্তমান।
  • স্থলের স্তন্যপায়ীদের বহিঃকর্ণ (Pinna) উপস্থিত থাকলেও জলের স্তন্যপায়ীদের তা অনুপস্থিত।
  • দেহ গহ্বর তথা সিলোম পেশিবহুল ডায়াফ্রাম (Diaphragm) দ্বারা আড়াআড়িভাবে বিভক্ত হয়ে বক্ষ গহ্বর ও উদর-গহ্বর সৃষ্টি করে।
  • পরিণত লোহিত রক্ত কণিকা (Red Blood Corpuscles) নিউক্লিয়াসবিহীন (Nucleus)।
  • উষ্ণ-রক্তবিশিষ্ট (warm-blooded) এ প্রাণীদের হৃদযন্ত্র চার প্রকোষ্ঠ (দুটি অলিন্দ [Atrium] ও দুটি নিলয়বিশিষ্ট [Ventricle]) এবং শ্বসনাঙ্গ ফুসফুস।
  • উদাহরণ: Homo sapiens (মানুষ), Panthera tigris (বাঘ)
শেয়ার:

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 + 9 =