পরিমাপের একক

পরিমাপের একক

আচ্ছা ভাবোতো পরিমাপের মানদণ্ড না থাকলে তোমার দৈনন্দিন জীবন কেমন হত? তোমার স্কুলে যেতে কত সময় লাগে? শিখোর একটা ভিডিও লেসন দেখতে কী পরিমাণ ডেটা খরচ হয়? তোমার হাতের মোবাইল ফোনটির ভর কত? তুমি যেই মাঠে ক্রিকেট খেল তা কত লম্বা?

এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে তোমার সবথেকে উপকারি tools হচ্ছে পরিমাপের একক। এই একক না থাকলে তুমি উপরের প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিতে খুব মুশকিলে পড়ে যেতে। একক আছে বলেই তুমি খুব সহজেই উত্তর দিতে পারো, স্কুলে যেতে 15 মিনিট সময় লাগে, শিখোর একটা ভিডিও লেসন দেখতে 10MB ডেটা খরচ হয়, মোবাইল ফোনটির ভর 250gm, এবং যেই মাঠে ক্রিকেট খেলো তা 100 মিটার লম্বা। 

তাহলে বুঝতেই পারছো পরিমাপের একক তোমার জীবন কত সহজ করে দিয়েছে। তাই আজকে আমরা এই ব্লগে পরিমাপের একক নিয়ে আলোচনা করবো।    

এককের প্রয়োজনীয়তা

কল্পনা করো তুমি ঈদের সময় গ্রামে দাদা বেড়াতে এসেছো এবং বিকেল বেলা সবার সাথে ক্রিকেট খেলতে মাঠে গেলে। তোমার শহরের মাঠের তুলনায় এই মাঠটা এতটাই বড় যে তুমি অবাক হয়ে জানতে চাইলে এই বিশাল মাঠটার জায়গার পরিমান কত? পাশ থেকে তোমার একজন চাচাতো ভাই উত্তর দিলো প্রায় এক একর। এই উত্তর শুনে তুমি হয়তো আরও বেশি অবাক হয়ে গেছ কারণ একর কী তুমি জানো না।

তুমি হয়ত আশা করেছিলে উত্তর আসবে বর্গ মিটার এককে। তুমি হয়তো মিটার এককে দৈর্ঘ্য বা ক্ষেত্রফল প্রকাশে অভ্যস্ত। কিন্তু গ্রামে যেই মাঠে তুমি ক্রিকেট খেলার জন্য এসেছো তা একটি কৃষি জমি। এবং গ্রামে জমির হিসেব একর এককে পরিমাপ করা হয়।     

দেখলেতো পরিমাপের এককের এই ভিন্নতার কারণে কেমন ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলো।

আর এই ভুল বোঝাবুঝি দূর করার জন্যই বিশ্ব জুড়ে পরিমাপের সাধারণ এককের প্রচলন আছে। যা এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। 

এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি

দেশ বা এলাকাভেদে পরিমাপের এককরে ভিন্নতা রোধের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিমাপের সাতটি  সাধারণ একক ব্যাবহার করা হয়। এই একক গুলোকে SI একক বলে। SI ফরাসি ভাষার Systeme International d’Unites থেকে এসেছে। SI একক গুলো হচ্ছে দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, বৈদ্যুতিক প্রবাহ, তাপমাত্রা, পদার্থের পরিমাণ, দীপন তীব্রতা। নিচের ছকটি থেকে এই সাতটি এককের প্রতীক দেখে নাও

Table

Description automatically generated

এই এককগুলো খুব সহজেই এই ছন্দের মাধ্যমে মনে রাখতে পারো

Text, letter

Description automatically generated

এই ছক দেখে হয়তো তুমি ভাবছো এগুলো দিয়ে তো তোমার স্কুল বাসের বেগ মাপা যাবে না। কারণ বাসের বেগের একক হচ্ছে ms^-1 অথবা kmh^-1. যা এই ছকে নেই। তাহলে এবার কী হবে?

তুমি এই ব্যাপারে চিন্তা করে মাথা নষ্ট কোরো না। কারণ এই সমস্যার সমাধান এই ফিল্ডের দার্শনিকেরা করে রেখেছে। তোমাকে আবার নতুন করে চাকা আবিষ্কার করেতে হবে না। I mean, ছকে যে সাতটি একক দেখেছো তার মধ্যেই তোমার তোমার স্কুল বাসের বেগ মাপার একক লুকিয়ে আছে।  

এই ব্যাপারটি ভালো করে বুঝতে হলে তোমাকে এককের প্রকারভেদ বুঝতে হবে। যা পরবর্তী অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে।

এককের প্রকারভেদ

গত অনুচ্ছেদে তুমি যে সাতটি একক দেখেছো সেগুলো হচ্ছে মৌলিক রাশির একক। অর্থাৎ যে সকল রাশি পরিমাপের জন্য অন্য কোন রাশির উপর নির্ভর করতে হয় না সেই সকল রাশির এককই হচ্ছে মৌলিক একক। আরেক ধরনের একক আছে যা কিনা লব্ধ একক নামে পরিচিত।

একটু ভেঙে বলি। লব্ধ একক হচ্ছে একাধিক মৌলিক এককের গাণিতিক মিশ্রণের ফল। যেমন: দৈর্ঘ্যকে সময় দিয়ে ভাগ দিলে বেগ পাওয়া যায়।

বেগ =দৈর্ঘ্য/সময় 

এখানে দৈর্ঘ্য ও সময়ের একক বসালে তুমি বেগের একক পেয়ে যাবে।

সুতরাং, বেগের একক =m/s=ms^-1

এভাবেই মৌলিক এককগুলো দিয়ে যেকোনো রাশির একক বের করা যায়।

মৌলিক এককগুলোর সংজ্ঞা

  • সেকেন্ড (s): একটি সিজিয়াম ১৩৩ পরমাণুর ৯,১৯২,৬৩১,৭৭০টি স্পন্দন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে ১ সেকেন্ড বলে। সিজিয়ামের এই স্পন্দন দিতে যেমন এক সেকেন্ড সময় লাগে তেমনিভাবে তোমার এক হাজার এক বলতেও এক সেকেন্ড সময় লাগবে।   
  • মিটার (m): শূন্য মাধ্যমে 1/299792458 সময়ে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে বলা হয় এক মিটার। এই সংজ্ঞা দেখে হয়তো কোনভাবে তোমাকে সাহায্য করবে না তবে তুমি যদি স্বাভাবিক উচ্চতার একজন মানুষ হয়ে থাকো তাহলে মাটি থেকে তোমার পেট পর্যন্ত উচ্চতা মোটামোটিভাবে এক মিটার।
  • কিলোগ্রাম (kg): প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবককে 6.626×10^-34 ms^-2 দিয়ে ভাগ করলে যে ভর পাওয়া যায় তাকে কিলোগ্রাম বলে।
  • অ্যাম্পিয়ার (A): প্রতি সেকেন্ডে 1/1.620×10^-19 সংখ্যক ইলেকট্রনের সমপরিমাণ চার্জ প্রবাহিত হলে সেটি হচ্ছে এক অ্যাম্পিয়ার।
  • মোল (M): যে পরিমাণ বস্তুতে অ্যাভোগ্যাড্রোর ধ্রুবক (6.023×10^23) সংখ্যক কণা থাকে সেটি হচ্ছে এক মোল।
  • কেলভিন (K): পানির ত্রৈধবিন্দু (Triple point) তাপমাত্রাকে 273.16 দিয়ে ভাগ দিলে যে তাপমাত্রা পাওয়া যায়, তাকে 1K বলে।
  • ক্যান্ডেলা (cd): সেকেন্ডে 540×10^12 বার কম্পনরত আলোর উৎস থেকে যদি এক স্টেরেডিয়ান (Steradian) ঘণকোণে এক ওয়াটের 683 ভাগের এক ভাগ বিকিরণ তীব্রতা পৌঁছায় তাহলে সেই আলোর তীব্রতা হচ্ছে এক ক্যান্ডেলা।

যাইহোক এক একরের ক্রিকেট মাঠের খেলা হয়তো উপভোগ করতে পারোনি এই চিন্তায় যে এই মাঠের ক্ষেত্রফল মিটার এককে কত হবে তা ভেবে। আমি তোমাকে সাহায্য করছি। এক একর হচ্ছে 4046 বর্গ মিটারের সমান। আশা করি তুমি চিন্তামুক্ত হয়েছো। তাহলে এবার নিশ্চিন্তে সাধারণ পরিমাপের এককের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে যাও।   

শেয়ার:

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − 7 =