রসায়নের পরিধি

রসায়নের পরিধি বা ক্ষেত্রসমূহ

রসায়ন কাকে বলে?

বিজ্ঞানের যে শাখায় পদার্থের গঠন, পদার্থের ধর্ম এবং পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে রসায়ন বলে।

রসায়নের পরিধি

যেখানে পদার্থ আছে সেখানেই রসায়ন আছে। বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ থাকে। বায়ুমণ্ডলে কিছু কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন অনবরত ঘটছে। আমরা যে মাটির উপরে বসবাস করছি সে মাটিতেও প্রতি মুহূর্তে ঘটে যাচ্ছে অসংখ্য পরিবর্তন। শুধু বর্তমান সময় কেন, সুদূর অতীতেও এই পরিবর্তন ঘটেছে। যখন এ পৃথিবীর প্রথম জন্ম হলো তখন পৃথিবী এমন ছিল না, পৃথিবী ছিল খুবই উত্তপ্ত। সেখানে কোনো বাতাস ছিল না। ছিল না কোনো জীবের অস্তিত্ব। কোটি কোটি বছর ধরে ঘটেছে। ও অসংখ্য রাসায়নিক পরিবর্তন। সৃষ্টি হয়েছে বায়ুমণ্ডল, সৃষ্টি হয়েছে পানি, সৃষ্টি হয়েছে হাজারো রকমের পদার্থ। এই সবকিছু মিলে পৃথিবীকে জীবজগতের জন্য বসবাস উপযোগী করেছে।   

মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ তা ক্ষুদ্র অণুজীব (যেমন- ব্যাকটেরিয়া, অ্যামিবা ইত্যাদি) হোক আর বৃহৎ উদ্ভিদ বা প্রাণীই হোক সকলের দেহই বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। প্রতিটি দেহ হলো এক একটি বড় রাসায়নিক কারখানা। এখানে প্রতি মুহূর্তেই ঘটে চলেছে অসংখ্য রাসায়নিক বিক্রিয়া। আর সে জন্যই আমরা বেঁচে আছি। 

আবার, সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষ বিভিন্ন পদার্থের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে তৈরি করে চলেছে আমাদের ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী। যেমন- তুমি যে জামাকাপড় পরছ, যে পেস্ট দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করছ, যে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছ বা ত্বকে যে কসমেটিকস ব্যবহার করছ তা সবই রসায়নের অবদান।

এছাড়া আমরা পরিষ্কারের কাজে সাবান, টয়লেট ক্লিনার, জীবন রক্ষার জন্য ব্যবহার করছি বিভিন্ন ধরনের ওষুধ-সামগ্রী। আমাদের খাদ্য চাহিদাকে পূরণ করার জন্য ফসলের ক্ষেতে ব্যবহার করছি সার ও কীটনাশক। যানবাহনে ব্যবহার করছি পেট্রল, ডিজেল এসবই শিল্প ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদার্থের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে তৈরি করা হচ্ছে।

রসায়নের পরিধি আসলে আরও অনেক বড়। চলো কিছু উদাহরণ দেখে নেই।

জেগে থাকার জন্য আমরা কফি খাই। কারণ, কফিতে ক্যাফেইন এবং ট্যানিক এসিড থাকে যা আমাদের স্নায়ুকে সজাগ রাখে। আমরা যে রঙ্গিন সবজি খাই সেগুলো ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস এর কারণে রঙ্গিন হয়ে থাকে।  আবার, সূর্যের আলো থেকে বাঁচতে আমরা sunscreen ব্যবহার করি। কারণ এতে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ সূর্যের UV রশ্মি থেকে স্কিনকে রক্ষা করে। অসুখ হলে আমরা যে ঔষধ খাই সেগুলোও রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এই ঔষধ আবার শরীরের ভেতরে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে আমাদের রোগমুক্ত করে। এছাড়াও, হাইড্রোক্লোরিক এসিড আমাদের পাকস্থলীতে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য পরিপাক করতে সাহায্য করে।

গাড়িতে ডিজেল, পেট্রোল এসব ব্যবহার করি যা হাইড্রোজেন ও কার্বন দ্বারা গঠিত হাইড্রোকার্বন যৌগ। এগুলো সম্পর্কে তুমি পরবর্তীতে বিস্তারিত জানতে পারবে।

পরিশেষে রসায়নের পরিধি নিয়ে বলতে গেলে ছোট পরিসরে বলে শেষ করা সম্ভব না।

শেয়ার:

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × three =