নিঃসরণ

নিঃসরণ

কোনো সরু ছিদ্রপথ দিয়ে বেশি ঘনত্বের জায়গা থেকে কম ঘনত্বের জায়গায় কোনো গ্যাসের সজোরে বেরিয়ে আসার ঘটনাকে নিঃসরণ বলে। নিঃসরণ এক ধরণের ব্যাপন। কোনো গ্যাসে অনেক বেশি চাপ প্রয়োগ করলে গ্যাসের অণুগুলো অনেক কাছাকাছি চলে আসে, তখন সেই গ্যাসটা তরলের মত আচরণ করে। এক্ষেত্রে তরলের ঘনত্ব অবশ্যই গ্যাসের ঘনত্বের চেয়ে বেশি থাকে। যখন কোনো আবদ্ধ পাত্রে তরল অবস্থায় গ্যাসকে রাখা হয়, তখন সেই গ্যাস পাত্রের গায়ে প্রচন্ড চাপ তৈরি করে। ফলে পাত্রের ভেতরে একইসাথে গ্যাসের ঘনত্ব এবং চাপ অনেক বেশি থাকে। যদি সেই পাত্রে একটা ছোট ফুটো করে দেওয়া হয়, তবে সেই তরল গ্যাস সেই পথ দিয়ে সজোরে বাইরে বেরিয়ে আসবে, কারণ পাত্রের বাইরে বাতাসের ঘনত্ব এবং চাপ দুটোই কম। এই ঘটনাটি হচ্ছে নিঃসরণ। তাপ প্রয়োগ করলে ব্যাপনের মত নিঃসরণের হার বাড়ে।

আমরা বাসা-বাড়িতে যে গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করে রান্না করি, এই সিলিন্ডারের ভেতরে আসলে গ্যাসটা গ্যাসীয় রূপে থাকে না, গ্যাস তরল রূপে থাকে। ফলে এটির ঘনত্ব এবং চাপ অনেক বেশি থাকে। চুলা জ্বালানোর সময় যখন সিলিন্ডারের মুখ খোলা হয়, তখন পাইপের মাথায় গ্যাসীয় অবস্থায় গ্যাস সজোরে বের হয় যেটা নিঃসরণের ঘটনা।

মনে রাখতে হবে, বাসা-বাড়িতে থাকা এসব সিলিন্ডারের ভেতরে প্রোপেন এবং বিউটেন গ্যাসকে উচ্চচাপ দিয়ে তরল অবস্থায় রাখা হয়। সেইসাথে আমরা যানবাহনে জ্বালানী হিসেবে যে CNG (Compressed Natural Gas) ব্যবহার করি এটিও উচ্চচাপে সংকুচিত মিথেন গ্যাস।

একটি বেলুনকে ফু দিয়ে ফোলানোর পর এর উপর এক টুকরো টেপ লাগিয়ে এর উপর দিয়ে বেলুনটিকে ছিদ্র করলে দেখা যাবে বেলুনের ভিতরের সমস্ত বাতাস ছিদ্রপথ দিয়ে সজোরে বেরিয়ে গিয়ে বেলুনটি চুপসে গেছে (টেপ না লাগিয়ে বেলুনটা ফুটো করার চেষ্টা করলে সেটি সশব্দে ফেটে যাবে)। বেলুনের ভেতরে বাতাসের চাপ বেশি ছিল এবং বেলুনের বাইরে বাতাসের চাপ কম ছিল। তাই উচ্চচাপের প্রভাবে ছিদ্রপথ পাওয়ার সাথে সাথে বেলুনের বাতাস নিম্নচাপের স্থানের দিকে ধাবিত হয়েছে। এটি মূলত নিঃসরণ। অর্থাৎ কোনো সরু ছিদ্র দিয়ে গ্যাস যখন উচ্চচাপের স্থান থেকে নিম্নচাপের স্থানের দিকে আসে তখন এই প্রক্রিয়াটিকে ও নিঃসরণ বলে।

শেয়ার:

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × three =