ট্রান্সমিশন ক্যাবল প্রযুক্তির নতুন রূপ হলো ফাইবার। কতগুলো অপটিক্যাল ফাইবারের সমন্বয়ে তৈরি হয় ফাইবার অপটিক ক্যাবল। ফাইবার গুলো রাসায়নিকভাবে নিরপেক্ষ এবং আলো পরিবহনে সক্ষম হয় কেননা এগুলো একধরনের অন্তরক পদার্থ যেমন ডাই-ইলেকট্রিক বা সিলিকা অথবা মাল্টি কম্পোনেন্ট কাঁচ দিয়ে তৈরি করা হয়।এই অপটিক্যাল ফাইবারের সবচেয়ে বড় সুবিধা বা বৈশিষ্ট্য হলো তড়িৎ সিগন্যালের পরিবর্তে এটি আলোক বা লাইট সিগন্যাল ট্রান্সমিট করে।একটি প্রতিরক্ষামূলক টিউবের ভেতরে প্রতিটি ফাইবারকে আলাদা আলাদা প্লাস্টিকের স্তর দ্বারা আবৃত করে রাখা হয় যাতে বাহ্যিক হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করা যায়।
SC-কানেক্টর, ST-কানেক্টর, MT-RJ-কানেক্টর এর সাহায্যে ডিভাইসের সাথে কানেকশন দেওয়া হয়।
অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের বিভিন্ন অংশ:
কোর (Core): কোর হলো সবচেয়ে ভিতরের স্তর।এর মধ্য দিয়ে আলোক সিগন্যাল চলাচল করে। এটি সিলিকা মাল্টিকম্পোনেন্ট কাচ বা স্বচ্ছ প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। এর ব্যাস ৮-১০০ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।১ মাইক্রোমিটার/মাইক্রোন = ১০-৬ মিটার।
ক্ল্যাডিং (Cladding): কোরকে ঘিরে রাখা বাইরের স্তরটি হচ্ছে ক্ল্যাডিং। ক্ল্যাডিং কাচের তৈরি। কোর থেকে নির্গত আলোকরশ্মি প্রতিফলিত করে এটি পুনরায় কোরে ফেরত পাঠায়।ক্ল্যাডিং এর ব্যাস ১২৫ মাইক্রোমিটার।
বাফার (Buffer): তন্তুকে বাইরের পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
জ্যাকেট (Jacket): ক্লাডিং এর উপর প্লাস্টিক দিয়ে ঘেরা আবরণটিকে জ্যাকেট বলে। ফাইবার অপটিক তারকে ঘর্ষণ মরিচা,জলীয়বাষ্প থেকে রক্ষা করে জ্যাকেট।
অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের প্রকারভেদ:
কোরের গঠন অনুসারে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল দু প্রকার। যথা:
সিঙ্গেলমোড অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল: এই ক্যাবলে একসাথে কেবল একটি আলোক সংকেত বা লাইট সিগন্যাল প্রেরণের পথ থাকে। কোরের ব্যাস ৮-১০ মাইক্রোন হয়ে থাকে। দীর্ঘ দূরত্বে ডেটা পাঠানোর ক্ষেত্রে উপযোগী। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও টেলিফোন কোম্পানিতে ব্যবহৃত হয়।
মাল্টিমোড অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল: এই ক্যাবলে একসাথে একাধিক আলোক সংকেত বা লাইট সিগন্যাল প্রেরণের পথ থাকে। কোরের ব্যাস ৫০-১০০ মাইক্রোন হয়ে থাকে। সল্প দূরত্বে ডেটা পাঠানোর ক্ষেত্রে উপযোগী। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে ডেটা এবং অডিও/ভিডিও প্রেরণে ব্যবহৃত হয়।
মাল্টিমোড অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল আবার দুই প্রকার। যথা:
স্টেপ ইনডেক্স মাল্টিমোড: কোরের প্রতিসরাঙ্ক সর্বত্র সমান হয়।
গ্রেডেড ইনডেক্স মাল্টিমোড: কোরের প্রতিসরাঙ্ক কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে কমতে থাকে।
অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের বৈশিষ্ট্য:
- এর গতি আলোর গতির সমান।
- একই সাথে একাধিক তথ্য প্রেরণ করা যায়।
- শক্তির অপচয় হয় না বললেই চলে।
- রাসায়নিক নিষ্ক্রিয়তা।
- এটিতে গিগাবাইট রেঞ্জ বা তার থেকে বেশি দ্রুত গতিতে ডেটা চলাচল করতে পারে।
- নেটওয়ার্কের ব্যাকবােন হিসেবে ফাইবার অপটিক ক্যাবল বেশি ব্যবহৃত হয়।
অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের সুবিধা:
- অধিক দূরত্বে উচ্চ গতিতে ডেটা ট্রান্সমিট করতে পারে।
- উচ্চ ব্যান্ডউইথ সুবিধা।
- এক দেশ থেকে অন্য দেশে ডেটা ট্রান্সফার করা যায়।
- ওজনে হালকা ও সহজে পরিবহনযোগ্য।
- শক্তির অপচয় কম।
- বিদ্যুৎ চৌম্বক প্রভাব(EMI) হতে মুক্ত।
- পরিবেশের তাপ-চাপ ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
- ডেটা সংরক্ষণের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সবচেয়ে বেশি।
অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের অসুবিধা:
- ফাইবার অপটিক ক্যাবলকে U আকারে বাঁকানো যায় না।
- ফাইবার অপটিক ক্যাবল অত্যন্ত দামি।
- ফাইবার অপটিক ক্যাবল ইনস্টল করা অন্যান্য ক্যাবলের চেয়ে তুলনামূলক কঠিন।
- অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল প্রয়োজন হয়।
অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের ব্যবহার:
- নেটওয়ার্কের ব্যাকবোন হিসেবে ফাইবার অপটিক ক্যাবল অধিক ব্যবহৃত হয়।
- বর্তমানে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে আলোকসজ্জা, সেন্সর ও ছবি সম্পাদনের কাজ করা হয়।
- সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে এক দেশের সাথে অন্য দেশের বা এক মহাদেশের সাথে অন্য মহাদেশের সংযোগে ব্যবহৃত হয়।