ইন্টারনেটে কীভাবে কোনো কিছু শিখবেন? - শিখো ব্লগ (Shikho Blog)

ইন্টারনেটে কীভাবে কোনো কিছু শিখবেন?

বর্তমানে নতুন কিছু শেখার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। এর সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে আপনি শেখার জন্য প্রয়োজনীয় বহু রিসোর্স খুঁজে পাবেন। তবে রিসোর্সগুলো কাজে লাগিয়ে সে বিষয়ে দক্ষতা লাভ করতে আপনাকে পরিকল্পনামাফিক এগোতে হবে। এ আর্টিকেল থেকে জানুন কীভাবে ইন্টারনেটের সাহায্যে নতুন কিছু শিখবেন।

ইন্টারনেটে শেখার সুবিধা কী কী?

কন্টেন্ট ফরম্যাট: ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে থাকা শিক্ষণীয় কন্টেন্ট নানা ফরম্যাটে পেতে পারেন আপনি। যেমন, টেক্সট, ইমেজ, ভিডিও ও অডিও। কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে কোন ফরম্যাটে শিখবেন, পছন্দ অনুযায়ী তা স্বাধীনভাবে নির্বাচন করার সুবিধা রয়েছে আপনার জন্য।

জায়গা: ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে এমন যেকোনো জায়গা থেকে শিখতে পারবেন।

সময়: অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজের সুবিধামতো সময়ে শিখতে পারবেন।

ডিভাইস: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খুব সহজে মোবাইলের ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিখতে পারবেন।

কোর্স ও ট্রেনিং: কোনো বিষয় নিজে নিজে বুঝতে সমস্যা হলে অনলাইনে কোর্স বা ট্রেনিং করতে পারেন আপনি। পছন্দের বিষয়ের উপর দেশী-বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেটও অর্জন করতে পারেন। আবার অনলাইন টিউটোরিয়াল বা লার্নিং প্ল্যাটফর্মে অনেক সময় দলীয় আলোচনার সুযোগ থাকে। এটি আপনার শেখার কাজকে সহজ আর উপভোগ্য করে তুলতে পারে।

ইন্টারনেটে কী কী শিখতে পারবেন?

জ্ঞান-বিজ্ঞানের যেকোনো বিষয়

অংক থেকে শুরু করে মহাকাশ বিজ্ঞান – যেকোনো বিষয়ে ধারণা পেতে ইন্টারনেট ভালো একটি জায়গা। তবে সব বিষয় একভাবে শেখা সম্ভব নয় এর মাধ্যমে। বিশেষ করে যেখানে হাতেকলমে পরীক্ষানিরীক্ষা করে শেখার ব্যাপার থাকে। যেমন, আর্টিকেলের পর আর্টিকেল পড়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে আপনি জানতে পারলেও এ বিষয়ে শেখার সীমাবদ্ধতা থেকেই যাবে। কারণ এর জন্য ল্যাবরেটরিতে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই।

শখের বিষয়

আপনার ব্যক্তিগত আগ্রহ আর শখের নানা বিষয় নিয়ে অনলাইনে শিখতে পারবেন। যেমন:

  • ছবি আঁকা
  • গান
  • নাচ
  • মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট বাজানো
  • অরিগ্যামি (Origami) বা কাগজ ভাঁজ করে নতুন কিছু বানানো
  • পটারি (Pottery) বা মাটি দিয়ে জিনিস বানানো
  • সেলাইয়ের কাজ
  • কাপড়ের ডিজাইন
  • বাগান করা
  • ফটোগ্রাফি

দৈনন্দিন জীবনের স্কিল

এমন কিছু স্কিল আছে যেগুলো শিখলে আপনার প্রতিদিনের জীবনে কাজে দেবে। ইন্টারনেটে প্রচুর ভিডিও রয়েছে শুধু এসব স্কিলের উপর। যেমন:

  • রান্নাবান্না ও বেকিং
  • বাসা পরিষ্কার ও সাজানো

যোগাযোগ আর ভাষার দক্ষতা

যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর জন্য অথবা নতুন সংস্কৃতি, সভ্যতা বা দেশকে জানতে আপনি হয়তো নিজের মাতৃভাষা ছাড়াও অন্য ভাষা শিখতে চান। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট হতে পারে আপনার উপযুক্ত শিক্ষক।

‘Duolingo’ আর ‘Rosetta Stone’-এর মতো ভাষা শিক্ষার অ্যাপগুলোকে কাজে লাগিয়ে সহজেই শিখে ফেলতে পারেন নতুন একটি ভাষা। আবার ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখেও প্র্যাকটিস করার সুযোগ রয়েছে।

ভাষা শেখার খুব চমৎকার একটা উপায় হচ্ছে ঐ দেশের মানুষের সাথে কথা বলা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এরকম কোনো কমিউনিটির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে নতুন একটি ভাষা আয়ত্ত করতে পারবেন আপনি।

দরকারি সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন চালানোর স্কিল

পড়াশোনা করুন বা চাকরি করুন – কম্পিউটারের সাধারণ ব্যবহার আপনাকে জানতেই হবে। এর মধ্যে রয়েছে কয়েকটি সফটওয়্যার আর অ্যাপ্লিকেশন। যেমন:

  • মাইক্রোসফট অফিস (এমএস ওয়ার্ড, এমএস এক্সেল, এমএস অ্যাক্সেস, পাওয়ারপয়েন্ট)
  • গুগল অ্যাপস (জিমেইল, গুগল ড্রাইভ, গুগল ডকস, গুগল শীটস, গুগল স্লাইডস, গুগল মিট)

এসব সফটওয়্যার আর অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার ধাপে ধাপে শেখার জন্য অসংখ্য টিউটোরিয়াল আপনি খুঁজে পাবেন ইন্টারনেটে।

বিশেষ ডিজিটাল স্কিল

এমন কিছু ডিজিটাল স্কিল রয়েছে যেগুলোর উপর আপনি ক্যারিয়ার বানাতে পারবেন। অবশ্য শখের বশেও এগুলো শেখা সম্ভব। এ ধরনের স্কিল নিয়ে অনলাইনে শেখার সুযোগ পাবেন সবসময়। যেমন:

  • গ্রাফিক ডিজাইন
  • ভিডিও এডিটিং
  • অ্যানিমেশন
  • ওয়েব ডিজাইন
  • ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (UX) ডিজাইন
  • ডেটা অ্যানালিসিস
  • ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
  • সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
  • ডিজিটাল মার্কেটিং

লক্ষ্য ঠিক করুন

কোনো কিছু শেখার আগে নিজের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ঠিক করে নিন। শুধু জানার ইচ্ছা আছে বলে শিখছেন নাকি ব্যক্তিগত ও পেশাদারি জীবনে কাজে লাগানোর জন্য শিখছেন? কিংবা যে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বা শিখতে চাইছেন, তার পেছনে অর্থ ব্যয় করতে চান কি না। লক্ষ্যভেদে আপনার শেখার পদক্ষেপগুলো ভিন্ন রকম হবে।

অনলাইনে শুধু জানার জন্য শিখতে চাইলে হয়তো আপনি কম খরচ আর পরিশ্রম করতে চাইবেন। এক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ফ্রি প্ল্যাটফর্মগুলো আপনার চাহিদা পূরণে যথেষ্ট।

ব্যক্তিগত ও পেশাদারি জীবনে কাজে লাগানোর জন্য শিখতে হলে অনলাইনের বিভিন্ন ট্রেনিং কোর্স বা সার্টিফিকেট কোর্স করার কথা বিবেচনা করুন। এছাড়া, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধায়নে কিংবা ম্যাসিভ ওপেন অনলাইন কোর্সের (MOOC) মাধ্যমে ঐ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব।

অনলাইন সার্চকে কাজে লাগান

যা শিখতে চাইছেন, সে বিষয়ে সার্চ ইঞ্জিনে তথ্য খুঁজুন। এক্ষেত্রে সে বিষয়ে কী কী শেখার সুযোগ রয়েছে, সে সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেয়ে যাবেন। এ ধারণার ভিত্তিতে পরিকল্পনা বানাতে সুবিধা হবে।

প্রয়োজনীয় রিসোর্সের তালিকা বানান

আপনি যে বিষয়টি জানতে বা শিখতে চাইছেন, তার উপর প্রয়োজনীয় রিসোর্স হতে পারে:

  • ইউটিউবে থাকা ভিডিও
  • ইলার্নিং প্ল্যাটফর্মের ফ্রি কন্টেন্ট
  • জার্নাল আর্টিকেল
  • অনলাইন রিপোর্ট, হোয়াইট পেপার ও কেস স্টাডি
  • বিষয়ভিত্তিক ব্লগ যেখানে সে বিষয়ের অভিজ্ঞ প্রফেশনালরা লেখালেখি করেন
  • বিষয়ভিত্তিক পডক্যাস্ট

তালিকার রিসোর্সগুলোর ভিত্তিতে নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সাইট বা প্ল্যাটফর্ম বাছাই করে ফেলুন। উল্লেখ্য যে, ইন্টারনেটে ভুল তথ্যে ভরা কন্টেন্ট খুব সহজলভ্য। তাই এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন।

শেখার জন্য পরিকল্পনা বানান

কোন সময়ে কী কী শিখতে চান, সে অনুযায়ী আপনার পরিকল্পনা বানিয়ে নিন। এ পরিকল্পনা অনেকটা সিলেবাসের মতো কাজে দেবে। প্রয়োজনে নিজের মতো শেখার উপায় তৈরি করুন। ফলে গোছানোভাবে শিখতে পারবেন।

অনলাইন কোর্স বা ট্রেনিং করুন

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দক্ষতা অর্জনের জন্য আর বাস্তবসম্মত নির্দেশনা পেতে অনলাইন কোর্স বা ট্রেনিং করতে পারেন। বিশেষ করে ব্যক্তিগত ও পেশাদারি জীবনে কাজে আসে, এমন দক্ষতার বেলায় এটি প্রযোজ্য।

অনলাইন কোর্স বা ট্রেনিং নেবার আগে কয়েকটি বিষয় খেয়ালে রাখুন:

  • কোর্স বা ট্রেনিংয়ের দাম
  • কোর্স বা ট্রেনিংয়ে কোন ফরম্যাটের কন্টেন্ট দেয়া হবে
  • কোর্স বা ট্রেনিং থেকে যা শিখবেন, তার উপর পরীক্ষা নেয়া হবে কি না
  • কোর্স বা ট্রেনিংয়ে কেমন সময় দিতে হবে
  • কোর্স বা ট্রেনিংয়ের মেয়াদ
  • কোর্স বা ট্রেনিংয়ের সার্টিফিকেট দেয়া হবে কি না
  • কোর্স বা ট্রেনিং থেকে কী কী সাপোর্ট দেয়া হবে
  • যেখান থেকে অনলাইন কোর্স বা ট্রেনিং নিচ্ছেন, তার সুনাম

ইন্টারনেটে শিখতে থাকুন

অনলাইনে কোনো কিছু শেখার পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যক্তিনির্ভর। আপনার কাছে একটি বিষয়কে জানা বা শেখার গুরুত্ব কতটুকু, সেটি কেন জানতে চান বা শিখতে চান, কী কাজে লাগাবেন – এ ব্যাপারগুলো নিয়ে তাই পরিষ্কার ধারণা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। আবার নিজে নিজে শিখতে গিয়ে ধৈর্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায় বহু ক্ষেত্রে। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী ফ্রি রিসোর্স সংগ্রহ করে শিখবেন নাকি একবারে কোনো অনলাইন কোর্স করে নেবেন, সে সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে।

শেয়ার:

Similar Posts

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 − two =