জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা কোনও জীবের জিনোম পরিবর্তন করেন। অর্থাৎ বায়োটেকনোলজির প্রসেসিং ব্যবহার করে কোন জীবের জিনোমকে নিজের সুবিধানুযায়ী সাজিয়ে নেয়াকেই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বলা হয়। কোন জীব থেকে একটি নির্দিষ্ট জিন বহনকারী ডিএনএ (DNA) পৃথক করে ভিন্ন একটি জীবে স্থানান্তরের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া হয়ে থাকে। একে জেনেটিক মডিফিকেশনও বলা হয়। এটি ডিএনএ পরিবর্তন করার একটি প্রক্রিয়া। এটি মূলত উন্নত বৈশিষ্ট্যধারী উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টিতে কাজ করে। ডিএনএ হলো জীবদেহের নীলনকশা।
বিজ্ঞানীরা পৃথক জীবের বৈশিষ্ট্যগুলি বাড়ানোর বা সংশোধন করতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করেন। এটি রিকম্বিন্যান্ট ডিএনএ প্রযুক্তি এবং জিন থেরাপির সাথে জড়িত। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হল জিনগুলি পরিবর্তন করা এবং তার ফলাফলগুলি অধ্যয়ন করা এবং জিনগতভাবে পরিবর্তিত এই জিনটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা।
ইতিহাস
১৯৭০ সাল থেকে মূলত জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে প্রজনন ছাড়া ডিএনএ এর নতুন সিকুয়েন্স বা পর্যায়ক্রম তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় জ্যাক উইলিয়ামসন-এর সায়েন্স ফিকসন নোভেল Dragon’s Island-এ। পল বার্গ বানরের ভাইরাস ও ল্যাম্বডা ভাইরাসের ডিএনএ এর সংযোগ ঘটিয়ে বিশ্বের প্রথম recombinant ডিএনএ অণু তৈরি করেন। হার্বার্ট বয়ার এবং স্ট্যানলি কোহেন ১৯৭৩ সালে একটি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স জিন-এর ইনপুটের মাধ্যমে প্রথম ট্রান্সজেনিক জীব তৈরি করেছিলেন এবং এক বছর পরে রুডলফ জেনেশ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম ট্রান্সজেনিক জীব তৈরি করেছিলেন। হেলবার্ট বয়ার এবং রবার্ট সোয়ানসন ১৯৭৬ সালে বিশ্বের প্রথম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি “জেনেটেক” প্রতিষ্ঠা করেন। এক বছর পরে, জেনেটেক মানব ইনসুলিন (হিউম্যান ইনসুলিন) নামে পরিচিত ই. কলি ব্যাকটেরিয়া থেকে মানব প্রোটিন সোমাটোস্ট্যাটিন তৈরি করে।
বর্তমান বিশ্বে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের খাদ্যের যোগান দেয়া, মানুষের মৃতুকে জয় করার ইচ্ছা, শিল্প উৎপাদন, পরিবেশের উন্নয়নসহ মানুষের জীবনের নানা চাহিদা মেটানোই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং -এর মূল লক্ষ্য। মেডিকেল সায়েন্স এবং ফার্মাসিউটিক্যালস ও কসমেটিক ইন্ডাস্ট্রিতে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, অ্যানজাইম ও হরমোন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ব্যবহার
আধুনিক বিশ্বে, এটি খাদ্য শিল্প, ঔষধ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, শিল্প এবং কৃষি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও-
- ব্যাকটেরিয়ার কোষে ইনসুলিন উৎপাদন সবচেয়ে বড় সুবিধা।
- প্রাণী এবং সিরিয়াল পণ্য বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- জেনেটিক থেরাপি হল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সুবিধা, যা রোগ নিরাময় করতে পারে এবং জিন পরিবর্তন করতে পারে ত্রুটিপূর্ণ মানুষের।
- ইনসুলিন, মানুষের বৃদ্ধির হরমোন এবং ভ্যাকসিন তৈরি করা যেতে পারে।
- জ্বালানি ও ভ্যাকসিন তৈরি করা।
- জেনেটিক ত্রুটি সনাক্ত করা৷
উপকারিতা
বর্তমান যুগে এই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তবে উল্লেখযোগ্য কিছু উপকারিতা হল:
- কৃষির সম্ভাবনা বাড়ায়।
- নতুন উপাদান তৈরিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
- রোগ প্রতিরোধ উন্নত করতে সাহায্য করে।
- জেনেটিক স্তরের প্রতিরোধ তৈরি করে।
- চিকিৎসা গবেষণা বিকশিত হচ্ছে।
প্রতিটি জিনিসেরই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক থাকে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং যেমন মানব কল্যানে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে তেমনি এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন এটি ব্যবহার করে উত্পাদিত জৈবিক অস্ত্র তৈরী হচ্ছে এর কারণে এসব বিপজ্জনকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। গবেষণা প্রমাণ করেছে যে মানুষের ব্যবহারের জন্য উত্পাদিত কিছু জিএম খাদ্য কিছু কৃত্রিম জেনেটিক উপাদান ধরে রাখে যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক প্রভাব তৈরি করে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংকে ভুল পথে পরিচালিত করলে তা পরিবেশ ও মানুষের জন্য বিশাল হুমকির শিকার হতে পারে। তাই এসকম বিষয়ে দৃষ্টিপাত করতে হবে এবং এত উপকারী একটি ক্ষেত্রকে কেউ জেনো অপব্যবহার করতে না পারে সেই জন্য নৈতিকতার প্রসার ঘটাতে পারে। সঠিক পথে ব্যবহার করলে বলা যায়, এই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সহায়তায় একসময় মানব জীবন আরও অনেক উন্নত ও সহজ হবে।