ইলেকট্রন বিন্যাস

Electron Configuration (ইলেকট্রন বিন্যাস)

পরমাণুর ইলেকট্রনগুলোও নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নির্দিষ্ট কক্ষপথ বা শক্তিস্তরে ঘুরতে থাকে। যা আমরা বোর পরমাণু মডেল থেকেই জেনেছি। আজকে আমরা ইলেকট্রন বিন্যাস সম্পর্কে জানবো। আগেই জেনে নেই চলো অরবিট ও অরবিটাল সম্পর্কে। 

অরবিট (Orbit) বা প্রধান শক্তিস্তর:

পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ইলেকট্রনগুলি যে নির্দিষ্ট পথে ঘুরে সেই পথ গুলিকে ঐ পরমাণুর  অরবিট বা প্রধান শক্তিস্তর বলা হয়। একে n দিয়ে প্রকাশ করা হয়।  n এর মান 1 হলে,  তখন একে k অরবিট বলা হয়  একইভাবে n এর মান 2 হলে, L অরবিট, 3 হলে, M অরবিট এবং 4 হলে, N অরবিট বলে। 

অরবিটে ইলেকট্রন সংখ্যা:

প্রত্যেক অরবিটের ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা 2n2 squared , 

যেখানে, n=অরবিট সংখ্যা

নিচের ছকটি তে কোন অরবিটে ইলেকট্রন সংখ্যা কত আছে তা লিপিবদ্ধ করা আছে। 

শক্তিস্তর n এর মানসর্বোচ্চ ইলেকট্রন সংখ্যা 
K12
L28
M318
N432

নিম্ন শক্তিস্তর ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ হলে পরবর্তী শক্তিস্তরে ইলেকট্রন প্রবেশ করে। হাইড্রোজেন(পারমাণবিক সংখ্যা ১) থেকে আর্গন(পারমাণবিক সংখ্যা ১৮) এই নিয়ম মেনে চলে।  

১৯ বা তার বেশি পারমাণবিক সংখ্যা বিশিষ্ট মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসের সময় তৃতীয় শক্তিস্তর পূর্ণ না হয়ে চতুর্থ শক্তিস্তরে ইলেকট্রন প্রবেশ করে। এগুলোর ক্ষেত্রে তৃতীয় শক্তিস্তর পূর্ণ না হয়ে চতুর্থ শক্তিস্তরে ইলেকট্রন প্রবেশ করে। 

হাইড্রোজেন থেকে আর্গন পর্যন্ত মৌলগুলোর ইলেকট্রন বিন্যাস

ইলেকট্রন বিন্যাস কাকে বলে?

যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা 19 থেকে বেশি এমন কিছু মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস 

ইলেকট্রন বিন্যাস কাকে বলে?

অরবিটাল বা উপশক্তিস্তর:

 পরমাণুর যে স্থানে ইলেকট্রন পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, তাকে উপশক্তিস্তর বা অরবিটাল বলে। একে l দিয়ে বুঝানো হয়। এর মান অরবিট বা প্রধান শক্তিস্তর n এর উপর নির্ভরশীল এবং এর মান 0 থেকে (n-1) পর্যন্ত হয়। এগুলোকে s, p, d, f ইত্যাদি দিয়ে লেখা হয়।  

l এর মানঅরবিটাল সংখ্যা অরবিটাল
011s
122s ও 2p
233s, 3p ও 3d
344s, 4p, 4d ও 4f

বিভিন্ন উপশক্তিস্তরে ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা নির্দিষ্ট। উপশক্তিস্তরে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা= 2(2l+1)

S উপশক্তিস্তরে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা হবে = 2(2l+1) =2(2×0+1) =2

P উপশক্তিস্তরে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা হবে= 2(2×l+1) =2(2×1+1) =6 

d উপশক্তিস্তরে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা হবে= 2(2l+1) =2(2×2+1)=10

f উপশক্তিস্তরে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা হবে= 2(2l+1) =2(2×3+1)=14

ইলেকট্রন বিন্যাস:

পরমাণুর বিভিন্ন শক্তিস্তরে বা অরবিটালে কয়টি করে ইলেকট্রন বিদ্যমান তার সুনির্দিষ্ট বিন্যাস কে পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস বলে।

পরমাণুতে ইলেকট্রন প্রথমে সেই অরবিটালে প্রবেশ  করে যার শক্তি সর্বনিম্ন এবং পরে ক্রমান্বয়ে উচ্চশক্তির অরবিটালে প্রবেশ করে। অর্থাৎ কম শক্তির অরবিটালে ইলেকট্রন আগে প্রবেশ করবে এবং  যে  অরবিটালের শক্তি বেশি সেই  অরবিটালে ইলেকট্রন পরে প্রবেশ করবে। 

অরবিটালের মধ্যে কোনটির শক্তি কম আর কোনটির শক্তি বেশি কিভাবে বুঝবো? 

অরবিটালের মধ্যে কোনটির শক্তি কম আর কোনটির শক্তি বেশি  তা  অরবিটাল দুটির প্রধান শক্তিস্তরের মান (n) এবং উপশক্তিস্তরের মান (l)এর যোগফলের উপর নির্ভর করে। যে অরবিটালের (n+l) এর মান কম সেই অরবিটালের শক্তি কম এবং সেই অরবিটালেই ইলেকট্রন আগে প্রবেশ করবে। অপরদিকে (n+l) এর মান যে অরবিটালের বেশি তার শক্তিও বেশি এবং সেই অরবিটালেই  ইলেকট্রন পরে প্রবেশ করবে।

3d অরবিটালের জন্য n = 3 এবং l = 2 অতএব n+1 এর   মান 3 +2 =5 

আবার 4s অরবিটালের জন্য n  =4, l= 0  অতএব n  +1 এর  মান 4 + 0 =  4

কাজেই 3d অরবিটালের  চেয়ে 4s  অরবিটাল কম   শক্তিসম্পন্ন। তাই  ইলেকট্রন প্রথমে  4s  অরবিটালে

এবং পরে 3d  অরবিটালে প্রবেশ করবে। আবার, দুটি অরবিটালের (n+l) এর মান যদি সমান হয় তাহলে যে     অরবিটালটিতে n এর মান কম সেই অরবিটালে শক্তি কম হবে এবং সেই অরবিটালে ইলেকট্রন আগে প্রবেশ  করবে  ।  অপরদিকে, (n+l) এর   মানের   জন্য  যে  অরবিটালের n  এর

মান বেশি, সেই অরবিটালের শক্তিও বেশি, কাজেই সে অরবিটালে ইলেকট্রন পরে প্রবেশ  করবে  ।

তাহলে ইলেকট্রন বিন্যাসের জন্য উপশক্তিস্তর বা  অরবিটালের ধারাটি হয় এমন। এদের ক্রমবর্ধমান  শক্তি অনুসারে সাজানো হয়। 

1s < 2s < 2p < 3s < 3p < 4s < 3d < 4p < 5s < 4d < 5p < 6s < 4f < 5d < 6p < 7s

কয়েকটি উদাহরণ দেখে নাও 

Na(11) →  1s2 2s2 2p6 3s1

S (16) →   1s2 2s2 2p6 3s2 3p4 

Sc (21) = 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 3d1 4s2

ব্যতিক্রম ইলেকট্রন বিন্যাস

কিছু মৌলের জন্য আমরা ব্যতিক্রম ইলেকট্রন বিন্যাস দেখতে পাই।

যেমন আমরা জানি ক্রোমিয়ামের ইলেকট্রন সংখ্যা ২৪টি। তাই স্বাভাবিকভাবে ক্রোমিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস এমনটি হওয়ায় কথা ছিল 

Cr (24) → 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 3d4 4s2

কিন্তু আসলে এর ইলেকট্রন বিন্যাস  হলো এমন। 

Cr (24) → 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 3d5 4s1

যেখানে শেষ ইলেকট্রনটি 4s অরবিটালে না গিয়ে, 3d অরবিটালে যায়। কারণ, সাধারণভাবে দেখা যায়, সমশক্তিসম্পন্ন অরবিটালসমূহ অর্ধপূর্ণ বা সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ হলে সেই ইলেকট্রন বিন্যাস বেশি স্থিতিশীল হয়। একারণেই, d অরবিটালের স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য ক্রোমিয়ামের শেষ ইলেকট্রনটি 4s অরবিটালে না গিয়ে 3d অরবিটালে গিয়ে অর্ধপূর্ণ হয়ে স্থিতিশীলতা অর্জন করে। 

শেয়ার:

Similar Posts

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − 4 =