ক্রায়োসার্জারি

ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery)

ক্রায়োসার্জারি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দদ্বয় ক্রায়ো (Cryo) এবং সার্জারি (Surgery) থেকে। ক্রায়ো (Cryo) শব্দের অর্থ ‘খুব শীতল’ এবং সার্জারি (Surgery) শব্দের অর্থ ‘অস্ত্রচিকিৎসা’। ক্রায়োসার্জারি এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে অতি ঠাণ্ডা তাপমাত্রা ব্যবহার করে আমাদের ত্বকের অসুস্থ কোষগুলোকে ধ্বংস করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সালের দিকে মিশরীয়রা তুকের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতের চিকিৎসায় ঠাণ্ডা তাপমাত্রার ব্যবহার করতেন। আধুনিক ক্রায়োসার্জারির যাত্রা শুরু হয় Dr. Irving Cooper এবং Arnold Lee এর হাত ধরে।

ক্রায়োসার্জারিতে যে পদার্থ ব্যবহার করে ঠাণ্ডা তাপমাত্রা তৈরি করা হয়, তাকে ক্রায়োজেনিক এজেন্ট বলে। প্রথমে ক্রায়োজেনিক এজেন্ট হিসেবে কঠিন কার্বন ডাই অক্সাইডের ব্যবহার হয়। তারপর ১৯২০ সালের দিকে ক্রায়োসার্জারিতে তরল অক্সিজেনের ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৫০ সালে ডক্টর এলিংটন ক্রায়োসার্জারিতে তরল নাইট্রোজেন প্রয়োগ করেন এবং এখন পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রায়োজেনিক এজেন্ট। আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ক্রায়োজেনিক এজেন্টগুলো হলো: কঠিন কার্বন ডাই অক্সাইড, তরল অক্সিজেন, তরল নাইট্রোজেন, তরল নাইট্রাস অক্সাইড, তরল কার্বন ডাই অক্সাইড, তরল আর্গন, ইথাইল ক্লোরাইড, ডাইমিথাইল ইথার প্রোপেন, ফ্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন।

এখন চলো ক্রায়োসার্জারির ব্যবহারগুলো সম্পর্কে জানা যাক।

ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার:

  • ত্বকের ছোট টিউমার
  • তিল
  • আচিল
  • ত্বকের ক্যান্সার
  • যকৃত ক্যান্সার 
  • বৃক্ক ক্যান্সার 
  • প্রোস্টেট ক্যান্সার
  • ফুসফুস ক্যান্সার 
  • মুখের ক্যান্সার
  • পাইলস
  • planter fasciitis বা গোড়ালির সমস্যা

ক্রায়োসার্জারি কৌশল প্রয়োগ করে চিকিৎসা করাকে ক্রায়োথেরাপি বলে। ক্রায়োথেরাপি এর কতগুলো ধাপ আছে, সেগুলো সম্পর্কে এবার আলোচনা করা যাক।

ক্রায়োথেরাপির ধাপ:

  • আলট্রাসাউন্ড, ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজ (MRI) বা ব্রঙ্কোস্কপি পরীক্ষা করে অসুস্থ কোষগুলোর সঠিক অবস্থান ও আয়তন নির্ণয়।
  • কটন বাট, স্প্রে অথবা প্রোব বা সূচ ব্যবহার করে ক্রায়োজেনিক এজেন্ট আক্রান্ত জায়গায় ১২ সেকেন্ড প্রয়োগ।
  • ক্রায়োজেনিক এজেন্ট প্রয়োগ বন্ধ, আক্রান্ত জায়গাটির বরফ গলতে শুরু হওয়া এবং আক্রান্ত কোষগুলো ধ্বংস হওয়া।

ক্রায়োসার্জারিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

১। যারা ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা করেন, তাদের মধ্যে যোগাযোগ করার জন্য ইন্টারনেট, টেলিকনফারেন্সিং, ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবহার করা হয়।

২। এই চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল সংরক্ষণ করার জন্য ডেটাবেজ ব্যবহার করা হয়।

৩। আজকাল ক্রায়োসার্জারি রোবটের সাহায্যেও সম্পন্ন করা হচ্ছে।

৪। ডাক্তারদের ক্রায়োসার্জারি নিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য সিমুলেটর সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে।

এবার চলো ক্রায়োসার্জারির সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জানা যাক:

ক্রায়োসার্জারির সুবিধা

১। এ পদ্ধতিতে আক্রান্ত টিস্যুর প্রায় ৯০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যায়।

২। অন্যান্য অস্ত্রোপচারের মতো এই পদ্ধতির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

৩। খরচ তুলনামূলক কম।

৪। যারা কোনোরুপ অপারেশনের ধকল সহ্য করতে পারবে না, তাদের জন্য এই পদ্ধতি বেশ উপযোগী।

ক্রায়োসার্জারির অসুবিধা

১। যাদের ঠান্ডার সমস্যা আছে, তাদের ক্রায়োসার্জারি নেওয়া উচিত নয়।

২। ক্যান্সার যদি অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়ে, সেই তবে সেই ক্যান্সারের ট্রিটমেন্টের জন্য ক্রায়োসার্জারি নেওয়া উচিত নয়।

এখন তোমরা নিশ্চয়ই ক্রায়োসার্জারি কি, ক্রায়োজেনিক এজেন্ট, ক্রায়োসার্জারির ধাপ এবং এর সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জানতে পেরেছো।

শেয়ার:

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 − two =