রাসায়নিক বন্ধন

রাসায়নিক বন্ধন

পদার্থ বলতে বোঝায় অসংখ্য পরমাণুর এক সাথে অণু হিসেবে থাকতে চাওয়ার একটি স্থায়ী অবস্থা। আমাদের চারপাশে বাতাসে যে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, ক্লোরিন ইত্যাদি গ্যাসগুলো আছে এরা প্রত্যেকেই মৌলিক গ্যাস অণু। মৌলিক গ্যাসের অণুগুলো দ্বিপরমাণুক। যেমন N2, H2, F2, Cl2 ইত্যাদি। ওজোন, ফসফরাস, সালফার এরাও মৌলিক অণু কিন্তু এরা বহু পরমাণুক। আবার পানি (H2O), খাবার লবণ (NaCl), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), অ্যামোনিয়া (NH4) ইত্যাদি যৌগের অণুতে ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পরমাণু মিলে অণু গঠন করেছে। তাহলে তুমি বলতে পারো একই ধরনের দুই বা ততোধিক পরমাণু একত্রে মিলিত হয়ে মৌলের একটি অণু সৃষ্টি করে এবং ভিন্ন ধরনের দুই বা ততোধিক পরমাণুর সংযোজনের ফলে যৌগের অণু উৎপন্ন করে। সব অণুর মধ্যেই পরমাণুগুলো একধরণের বিশেষ আকর্ষণ বলের দ্বারা পরস্পর পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে।

এভাবে একই বা ভিন্ন ভিন্ন মৌলের দুই বা ততোধিক পরমাণু মিলিত হয়ে রাসায়নিক বন্ধনের সৃষ্টি হয়। আবার একই মৌলের অসংখ্য পরমাণু পরস্পর যুক্ত হয়েও রাসায়নিক বন্ধন সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- ধাতব বন্ধন। 

প্রতিটি মৌলের নির্দিষ্ট শক্তিস্তর আছে এবং প্রতিটি শক্তিস্তরে নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেকট্রন থাকে। কোন মৌলের সর্বশেষ শক্তিস্তরে যে কয়টি ইলেকট্রন থাকে, সেটাই হল তার যোজ্যতা ইলেকট্রন সংখ্যা বলে। 

যেমন,সোডিয়াম(Na) এর শেষ শক্তিস্তরে ১টি, কার্বনের(C) শেষ শক্তিস্তরে ৪টি এবং ক্লোরিনের(Cl) শেষ শক্তিস্তরে ৭টি ইলেকট্রন থাকে। সুতরাং সোডিয়ামের যোজ্যতা ইলেকট্রন সংখ্যা ১, কার্বনের যোজ্যতা ইলেকট্রন সংখ্যা ৪ এবং ক্লোরিনের যোজ্যতা ইলেকট্রন সংখ্যা ৭।

রাসায়নিক বন্ধনের আধুনিক মতবাদ অনুসারে রাসায়নিক বন্ধন গঠনের সময় পরমাণুগুলো সর্বাধিক স্থায়ী ইলেকট্রন গঠন কাঠামো অর্জনের চেষ্টা করে। নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর ইলেকট্রন গঠনের দিকে যদি আমরা লক্ষ করি তবে দেখব He ছাড়া প্রত্যেকেরই যোজ্যতা স্তরে আটটি করে ইলেকট্রন রয়েছে। He পরমাণুর যোজ্যতা স্তর প্রথম শক্তি স্তর। এখানে মাত্র দুটি ইলেকট্রন বর্তমান থেকেই যোজ্যতাস্তরকে ইলেকট্রন দ্বারা পরিপূর্ণ করে ।

প্রত্যেকটি নিস্ক্রিয় গ্যাসের সর্ববহি:স্থ কক্ষে ns2np6 ইলেকট্রন বর্তমান। এখানে n = 2,3,4 ইত্যাদি। সর্ববহি:স্থ কক্ষে

এরকম ns2npইলেকট্রন বিন্যাসই নিস্ক্রিয় গ্যাসে পরমাণুর অধিক সুস্থিতির কারণ। এ গঠনই নিম্ন শক্তি সম্পন্ন। অন্যান্য মৌলের পরমাণুগুলোও ইলেকট্রনের দান, গ্রহণ, শেয়ার বা অন্য যে কোন ভাবে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন গঠন কাঠামো লাভের প্রবণতা দেখায় অর্থাৎ পরমাণুর সর্ববহি:স্থ শক্তিস্তরের অষ্টক অপূর্ণতা থেকে অষ্টক পূর্ণতা প্রাপ্তির প্রবণতা দেখায়। এটাই রাসায়নিক বন্ধন গঠনের মূল কারণ। 

শেয়ার:

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 1 =