কোন পদার্থ তাপ, চাপ কিংবা অন্য পদার্থের সংস্পর্শে আসলে তাদের পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তন দুই ধরণের।
- ভৌত পরিবর্তন
- রাসায়নিক পরিবর্তন
ভৌত পরিবর্তন:
যে পরিবর্তনের ফলে পদার্থের ভৌত অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, তাকে ভৌত পরিবর্তন বলে।
উদাহরণ:
বরফ গলে পানিতে পরিণত হয়। আর পানিকে তাপ দিলে জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়।
ভৌত পরিবর্তনের ফলে পদার্থের অণুর গঠনের কোন পরিবর্তন ঘটে না। তাই এই পরিবর্তনের ফলে নতুন কোন পদার্থ তৈরি হয়না। শুধুমাত্র তাদের মধ্যকার আন্তঃআণবিক দূরত্ব ও আকর্ষণ বলের মান পরিবর্তিত হয়। এর ফলে তাদের ভৌত অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। পদার্থ সাধারণত ৩ টি ভৌত অবস্থায় থাকে।
- কঠিন
- তরল
- গ্যাস
নিচে পদার্থের ভৌত অবস্থা ৩ টির মধ্যে তুলনা করা হল:
আলোচ্য বিষয় | কঠিন | তরল | গ্যাস |
আকার | নির্দিষ্ট | নির্দিষ্ট আকার নেই। যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রের আকার ধারণ করে | নির্দিষ্ট আকার নেই। |
আয়তন | নির্দিষ্ট | নির্দিষ্ট | নির্দিষ্ট আয়তন নেই। যে পাত্রে রাখা হয়, সে পাত্রের আয়তন দখল করে। |
আন্তঃআণবিক দূরত্ব | সবচেয়ে কম | তুলনামূলক বেশি | সবচেয়ে বেশি |
আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল | সবচেয়ে বেশি | তুলনামূলক বেশি | সবচেয়ে কম |
গতিশক্তি | সবচেয়ে কম | তুলনামূলক বেশি | সবচেয়ে বেশি |
ঘনত্ব | সবচেয়ে বেশি | তুলনামূলক বেশি | সবচেয়ে কম |
সংকোচনশীলতা | নেই | খুব কম | সবচেয়ে বেশি |
রাসায়নিক পরিবর্তন:
যে পরিবর্তনের ফলে এক বা একাধিক পদার্থ ভিন্ন পদার্থে পরিণত হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। রাসায়নিক পরিবর্তনকে রাসায়নিক বিক্রিয়াও বলে।
উদাহরণ: প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না করা হয়।
রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে পদার্থের অণুর গঠনের পরিবর্তন ঘটে। তাই, বিক্রিয়ার ফলে নতুন পদার্থ তৈরি হয়।
নিচে ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মধ্য পার্থক্য দেওয়া হল:
আলোচ্য বিষয় | ভৌত পরিবর্তন | রাসায়নিক পরিবর্তন |
অণুর গঠন | পরিবর্তিত হয়না | পরিবর্তিত হয় |
নতুন পদার্থ | সৃষ্টি হয়না | সৃষ্টি হয় |
পরিবর্তনের প্রভাব | ভৌত বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে | ভৌত ও রাসায়নিক উভয় অবস্থার পরিবর্তন ঘটে |
পরিবর্তনের কারণ | তাপ, চাপ | শক্তির শোষণ ও বিকিরণ |
বিক্রিয়ক:
যেসকল পদার্থ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তাদেরকে বিক্রিয়ক বলে।
উৎপাদ:
যেসকল পদার্থ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়, তাদেরকে উৎপাদ বলে।
একমুখী বিক্রিয়া:
কোন বিক্রিয়ার সব বিক্রিয়ক পদার্থ যখন উৎপাদে পরিণত হয় অর্থাৎ বিক্রিয়াটি শুধু সম্মুখ দিকে ঘটতে থাকে তখন, ঐ বিক্রিয়াটিকে একমুখী বিক্রিয়া বলে।
উভমুখী বিক্রিয়া:
যদি কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া এক সাথে সম্মুখদিক ও পশ্চাৎদিক থেকে সংঘটিত হয়, তবে সে বিক্রিয়াকে উভমুখী বিক্রিয়া বলে।
সম্মুখমুখী বিক্রিয়া:
উভমুখী বিক্রিয়ায় যখন বিক্রিয়ক উৎপাদে পরিণত হয় অর্থাৎ সম্মুখদিকে বিক্রিয়া ঘটে, তখন এই প্রক্রিয়াকে সম্মুখমুখী বিক্রিয়া বলে।
পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়া:
উভমুখী বিক্রিয়ায় যখন উৎপাদ বিক্রিয়কে পরিণত হয় অর্থাৎ পশ্চাৎদিকে বিক্রিয়া ঘটে, তখন এই প্রক্রিয়াকে পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়া বলে।
উভমুখী বিক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য:
- উভয় দিকে থেকে শুরু করা যায়।
- এ বিক্রিয়াগুলো সম্পূর্ণ হয় না। অর্থাৎ, বিক্রিয়কসমূহ সম্পূর্ণরূপে উৎপাদে পরিণত হয় না।
- সাম্যাবস্থায় আসার প্রবণতা আছে।
- সম্মুখ ও পশ্চাৎ বিক্রিয়ার হার সমান হলে বিক্রিয়া সাম্যাবস্থায় উপনীত হয়।
- সমীকরণ আকারে লিখতে = চিহ্নের পরিবর্তে ⇌ চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
উভমুখী বিক্রিয়া একমুখীকরণ:
- খোলা পাত্রে বিক্রিয়া ঘটিয়ে।
- বিক্রিয়াজাত অধঃক্ষেপ আলাদা করে।
- রাসায়নিকভাবে বিক্রিয়াস্থল থেকে আলাদা করে।