বায়োমেট্রিক্স

বায়োমেট্রিক্স

আমরা যারা সিম কার্ড রেজিস্ট্রেশন করেছি, তারা যদি লক্ষ্য করি যে আমরা সবাই একটি বিশেষ যন্ত্রে আংগুলের ছাপ দিয়ে তথ্য দিয়ে এসেছি। এটি মূলত ছিল একটি বায়োমেট্রিক্স ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার যেটি আমাদের আঙ্গুলের ছাপ নিখুঁতভাবে সংগ্রহ করতে পারে। এ ধরনের কিছু বায়োমেট্রিক যন্ত্রপাতি নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা বায়োমেট্রিক্স।

গ্রিক শব্দ bio এবং “metric” থেকে উৎপত্তি হয়েছে বায়োমেট্রিক্স। bio শব্দের অর্থ জীবন এবং metric শব্দের অর্থ পরিমাপ। বায়োমেট্রিক্স হচ্ছে এক ধরনের কৌশল বা প্রযুক্তি যার মাধ্যমে মানুষের দেহের গঠন বা আচার-আচরণের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে চিহ্নিত বা শনাক্ত করা যায়।

যেমন ধরো অনেক অফিসের দরজায় ফিংগারপ্রিন্ট স্ক্যানার ব্যবহার করা হয়। কেউ তার ফিঙ্গার স্ক্যান করলে যন্ত্রটি ঐ অফিসের কোনো কর্মচারীর ফিংগারপ্রিন্টের সাথে ম্যাচ করে কিনা তা চেক করে। যদি ম্যাচ খুঁজে পায়, তাহলে ওই লোক অফিসে প্রবেশ করতে পারে। 

একটি বায়োমেট্রিক্স ডিভাইসে তিনটি অংশ থাকে:

১। ইনপুট ডিভাইস

২। সফটওয়্যার

৩। ডেটাবেজ

বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতি দুই প্রকার: 

  • দেহের গঠনগত (Physiological) বায়োমেট্রিক্স
  • আচরণগত (Behavioral) বায়োমেট্রিক্স।

দেহের গঠনগত বায়োমেট্রিক্স, ফিংগারপ্রিন্ট রিডার, ফেইস রিকোগনিশন,আইরিস স্ক্যান ও ডিএনএ টেষ্ট এর মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। আবার আচরণগত বায়োমেট্রিক্স ভয়েস রিকোগনিশন বা সিগনেচার ভেরিফিকেশন এর মাধ্যমে করা হয়।

একটু আগেই আমরা ফিংগারপ্রিন্ট রিডারের উদাহরণ দেখেছি। এই পদ্ধতিতে মানুষের পরিচয় সনাক্ত করতে খুবই কম সময় লাগে এবং সফলতার পরিমাণ প্রায় শতভাগ। কিন্তু আঙ্গুল ভিজা থাকলে বা আঙ্গুলে ময়লা থাকলে এতে সঠিকভাবে ব্যক্তি শনাক্ত করা যায় না।

মানুষের মুখমন্ডলের বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে কোনো মানুষকে সনাক্ত করার পদ্ধতি হলো ফেইস রিকোগনিশন। এখানে দুই চোখের মধ্যবর্তী দূরত্ব, নাকের দৈর্ঘ্য ইত্যাদি হিসাব করে সনাক্ত করা হয়। এই পদ্ধতি সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়। কিন্তু ক্যামেরা ছাড়া এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় না। ক্যামেরায় আলোর পার্থক্য, চুলের স্টাইল পরিবর্তন, মেকআপ ব্যবহার ইত্যাদি, এই পদ্ধতিতে সঠিক ফলাফল পেতে সমস্যা সৃষ্টি করে।

চোখের আইরিস বা চোখের তারার রঙিন অংশ পরীক্ষা করে কোনো মানুষকে সনাক্ত করার পদ্ধতিই হল আইরিস স্ক্যান। একজন মানুষের চোখের আইরিস বা চোখের তারার রঙিন অংশ, অপর কোন মানুষের চোখের আইরিশের প্যাটার্নের সাথে মিলবে না আবার চোখের আইরিসের কখনো কোনো ক্ষয় হয়না তাই এটি সবচেয়ে নিখুঁতভাবে কোন ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে পারে। এতে সনাক্ত করতেও খুবই কম সময় প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই পদ্ধতি খুবই ব্যয়বহুল এবং চোখে চশমা থাকলে বা ঘরে আলো কম থাকলে এই পদ্ধতিতে ফলাফল পেতে সমস্যা হয়।

রক্ত, চুল ইত্যাদি থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে কোনো মানুষকে সনাক্ত করার পদ্ধতি হলো ডিএনএ টেষ্ট। অপরাধী শনাক্তে, পিতৃত্ব নির্ণয়ে, বিকৃত ডেডবডি শনাক্তে ডিএনএ টেষ্ট ব্যবহার করা যায়। তবে যমজদের ক্ষেত্রে ডিএনএ টেষ্ট সম্পূর্ণ এক হয় এবং এই পদ্ধতিতে খরচও তুলনামূলক বেশি।

আবার আচরণগত বায়োমেট্রিক্স ভয়েস রিকোগনিশন বা সিগনেচার ভেরিফিকেশন এর মাধ্যমে করা হয়। কণ্ঠস্বর বা ভয়েসের ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে মানুষকে সনাক্ত করার পদ্ধতির নাম ভয়েস রিকোগনিশন। সাধারণত কণ্ঠস্বর, শব্দের সুর, কণ্ঠস্বরের উত্থান-পতন, উচ্চারিত শব্দের মাত্রা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে নিরাপত্তা দেওয়া হয় বলে এই পদ্ধতিতে খরচ তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু ঠান্ডা বা সর্দি-কাশি হলে অনেক সময় সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না। আবার আজকাল বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে কোন ব্যক্তির কণ্ঠস্বর নকল করাও খুবই সহজ।

মানুষের হাতের স্বাক্ষরের ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে মানুষকে শনাক্ত করার পদ্ধতিই হলো সিগনেচার ভেরিফিকেশন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, সরকারি অফিস ইত্যাদি জায়গায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তবে যারা স্বাক্ষর জানেন না তারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন না।

বায়োমেট্রিক্স-এর সুবিধা:

  • যেহেতু সিস্টেমটি অনুভূতিহীন, সুতরাং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই এবং নিরাপত্তাও নিখুঁত।
  • প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও সার্বিকভাবে খরচ কম।

বায়োমেট্রিক্স-এর অসুবিধা:

  • আলোর প্রতিফলন মুখমণ্ডলের ছবির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে, ফলে মাঝে মাঝে এ সিস্টেমটি মুখমণ্ডল চিনতে পারে না।
  • শারীরিক ফিটনেসের ওপর কণ্ঠস্বরের তীব্রতার ওঠানামা হয়। ফলে কোনো কোনো সময় সিস্টেমটি কণ্ঠস্বর ঠিকমতো চিনতে পারে না।
  • প্রতিটি স্বাক্ষর একই রকম হয় না ফলে এক্ষেত্রেও সমস্যা হয়।
  • ইনস্টলেশন খরচ বেশি।
  • সিস্টেমটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য দক্ষ প্রয়োজন।

এখন তোমরা নিশ্চয়ই বায়োমেট্রিক্স কি এবং এর সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জানতে পেরেছো।

শেয়ার:

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − 12 =