দ্বিপদ নামকরণ

দ্বিপদ নামকরণ

আমাদের সবার যেমন first name, last name আছে, তেমনি উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম  গণ, প্রজাতি এই দুই অংশে বিভক্ত। বর্তমানে দুইটি পদের মাধ্যমে দ্বিপদ নামকরণ করা হলেও নামকরণের ইতিহাসের শুরুতে কিন্তু দুইয়ের অধিক পদ নিয়ে নামকরণ করা হত।  

দ্বিপদ নামকরণের ইতিহাস

দ্বিপদ নামকরণের পূর্বে যে কোনো উদ্ভিদের নামকরণের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নামকরণ পদ্ধতি অণুসরণ করা হতো না। নামকরণের ক্ষেত্রে বেশিরভাগই ল্যাটিন শব্দ ব্যবহার করা হতো। কারণ তখন ল্যাটিন ভাষাকে বিজ্ঞানের ভাষা বলে মনে করা হতো। মূলত তখন একটি নামের মাধ্যমে উদ্ভিদের নামকরণ করা হত, যেমন, Clethra. কিন্তু যদি একই ধরনের দুইটি বা তার বেশি উদ্ভিদ পাওয়া যেত, তাহলে তাদের নামের সাথে একটি অতিরিক্ত শব্দ যোগ করা হতো সেই উদ্ভিদকে চিহ্নিত করার জন্য, যেমন, Mespilos anthedons, যাকে আমরা পরিচিত পরিভাষায় ‘চেস্টনাট’ হিসেবে জানি। এক্ষেত্রে প্রথম নামটিকে এখন আমরা গণের নাম এবং দ্বিতীয় নামটিকে প্রজাতির নাম হিসেবে জানি। কিন্তু এভাবে প্রকৃতিতে যত বেশি প্রজাতি আবিষ্কার হতে থাকলো, তত এর প্রজাতির নামের অংশ আরো বড় হতে থাকলো। যেমন, টমেটোর নামকরণ একসময় দাঁড়ালো Solanum caule inermi herbaceo, foliis pinnatis incisis. ১৬২৩ সালে Caspar Bauhin দ্বিপদ নামকরণের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী ভূমিকা রাখেন। তিনি বেশিরভাগ উদ্ভিদের এরূপ বহুপদ নামকরণকে ছেঁটে দুটি অংশের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। কিন্তু শুধু Bauhin একা এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে তো হবে না। বিশ্বব্যাপী সবার এই দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতির সাথে পরিচিতি এবং এই একটি পদ্ধতি মেনে চলা জরুরি ছিলো। আর এই কাজটি করেন Carl von Linne বা Carolus Linnaeus. তিনি তাঁর Species Plantarum (১৭৫৩) এবং পরবর্তীতে Systema Naturae গ্রন্থের দশম সংস্করণে (১৭৫৮) দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি অনুসরণ করেন। এখানে তিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে Bauhin-এর দেয়া গণের নাম ব্যবহার করলেও, এর পরের প্রজাতির বর্ণনাকারী অংশকে একটি শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। আর লিনিয়াসের দেয়া এই নাম মনে রাখা ছিলো সহজ। তাই অবশেষে এই পদ্ধতিই বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেল।

দ্বিপদ নামকরণ

তাহলে এই দ্বিপদ নামকরণ কী তা তো তাহলে বোঝা গেল। সংজ্ঞা দিতে গেলে, দ্বিপদ নামকরণ বলতে বোঝায় দুটি পদের সমন্বয়ে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নামকরণের পদ্ধতি। এই নামকরণ ল্যাটিন ভাষায় করা হয় এবং এর দুইটি অংশ থাকে। প্রথম অংশে থাকে গণ এবং গণ নামের শেষে প্রজাতিক পদ যুক্ত করে প্রতিটি জীবের দ্বিপদ নামকরণ বা Binomial Nomenclature করা হয়। এই নামকে বৈজ্ঞানিক নামও বলা হয়।

দ্বিপদ নামকরণের প্রবর্তক

দ্বিপদ নামকরণের ক্ষেত্রে ক্যারোলাস লিনিয়াসের ভূমিকা ছিল অসামান্য। Systema Naturae গ্রন্থের দশম সংস্করণে (১৭৫৮) ক্যারোলাস লিনিয়াস জীবের নামকরণের ক্ষেত্রে দ্বিপদ নামকরণ নীতি প্রবর্তন করেন।

দ্বিপদ নামকরণের নীতি

কোনো জীবের নামকরণ পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল এবং তা কতগুলো নিয়ম মেনে সমাধান করা হয়। প্রাণীর নামকরণের নিয়মগুলো প্রাণী নামকরণের আন্তর্জাতিক সংস্থা International Commission on Zoological Nomenclature (ICZN) প্রণয়ন করে থাকে। প্রাণীর নামকরণের নিয়মগুলো হলো-

  • নামকরণে অবশ্যই ল্যাটিন(Latin) শব্দ ব্যবহার করতে হবে।
  • বৈজ্ঞানিক নামের দুটি অংশ থাকবে, প্রথম অংশটি গণ (Genus) নাম এবং দ্বিতীয় অংশটি প্রজাতি (Species) নাম।
  • জীবজগতের প্রতিটি বৈজ্ঞানিক নামকে অনন্য বা ইউনিক (unique) হতে হয়। কারণ, একই নাম দুটি পৃথক জীবের জন্য ব্যবহারের অনুমতি বা সর্বসম্মতিক্রমে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
  • বৈজ্ঞানিক নামের প্রথম অংশের প্রথম অক্ষর বড় অক্ষর হবে,বাকি অক্ষরগুলো ছোট অক্ষর হবে এবং দ্বিতীয় অংশটির নাম ছোট অক্ষর দিয়ে লিখতে হবে।
  • বৈজ্ঞানিক নাম মুদ্রণের সময় সর্বদা ইটালিক(Italian) অক্ষরে লিখতে হবে।
  • হাতে লেখার সময় গণ ও প্রজাতি নামের নিচে আলাদাভাবে দাগান্বিত দিতে হবে।
  • যদি কয়েকজন বিজ্ঞানী একই জীবকে বিভিন্ন নামকরণ করেন, তবে অগ্রাধিকার আইন অনুসারে প্রথম বিজ্ঞানী কর্তৃক প্রদত্ত নামটি সংগৃহীত হবে।
  • যিনি প্রথম কোনো জীবের বিজ্ঞানসম্মত নাম দিবেন তার নাম ও সালসহ উক্ত জীবের বৈজ্ঞানিক নামের শেষে সংক্ষেপে সংযোজন করতে হবে।

কয়েকটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর দ্বিপদ নাম

আশেপাশে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী দেখি আমরা। সবগুলোর অঞ্চল্ভিত্তিক নাম হয়তো আমরা সবাই জানি কিন্তু দ্বিপদ নাম অথবা বৈজ্ঞানিক নাম খুব মানুষেরই জানা থাকে। গবেষণামূলক কাজে এই বৈজ্ঞানিক নামগুলোই জানা প্রয়োজন। কয়েকটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম দেখে নেওয়া যাক-

  • আম – Mangifera indica
  • কাঁঠাল- Artocarpus heterophyllus
  • শাপলা – Nymphaea nuchali
  • কুনোব্যাঙ- Bufo melanostictus
  • মৌমাছি- Apis indica
  • জবা- Hibiscus rosa-sinensis

দ্বিপদী নামকরণের সুবিধা

  • একটি সার্বজনীন নামের মাধ্যমে একটি প্রাণীকে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায়।
  • প্রাণীদের শনাক্তকরণে ভূমিকা রাখে।
  • প্রাণীদের শ্রেণিবিন্যাসকরণ সহজ হয়।
  • একই গণের প্রজাতিদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।
  • নামের মাধ্যমেই কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
  • সহজেই প্রাণী এবং উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম মনে রাখা যায়।
শেয়ার:

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 15 =