Atom's structure

পরমাণুর মডেল

পরমাণুর ভিতরের মূল কণিকাসমূহের অবস্থান সম্পর্কে পরীক্ষালব্ধ ও যুক্তিনির্ভর চিত্রকে পরমাণু মডেল বলে।
পরমাণু নিয়ে অনেকগুলো মডেল আছে। তার মধ্যে প্রথম মডেল হলো, থমসন মডেল। এরপর এসেছে রাদারফোর্ড মডেল এবং এই মডেলের ভুলত্রুটিগুলো ঠিক করে সবশেষে এসেছে বোর মডেল। এখন আমরা রাদারফোর্ড এবং বোর মডেল সম্পর্কে জানবো
রাদারফোর্ড মডেল:
১৯১১ সালে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড, পরমাণুর উপর আলফা কণা চালনা করে একটি পরীক্ষা করেন। এবং এর উপর ভিত্তি করে তিনি এই মডেল প্রদান করেন। এই পরীক্ষাটি রাদারফোর্ডের আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা নামে পরিচিত।
রাদারফোর্ডের আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা:
বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড তার এই পরীক্ষায়, খুবই পাতলা 0.000৪ মিলি মিটার পুরুত্বের সোনার পাতের ওপর তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থেকে বের হওয়া উচ্চ গতির আলফা রশ্মি, ছিদ্রসহ লেড প্লেটের ভিতর দিয়ে চালনা করেন। পাতটির পেছনে একটি জিংক সালফাইডের প্রলেপ দেওয়া পর্দা রাখা হয়। আলফা রশ্মি এই পর্দার ওপর পড়লে উজ্জ্বল আলোর বিন্দু তৈরি হয়। এই পরীক্ষাটি একটি বন্ধ বায়ুশূন্য পাত্রে করা হয়।

চিত্র ১: রাদারফোর্ডের আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা (1)

পর্যবেক্ষণ:
রাদারফোর্ডের আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষার পর্যবেক্ষণ গুলো হলো-
১। বেশিরভাগ আলফা কণা প্রায় 99% সোনার পাত ভেদ করে সোজা বেরিয়ে পর্দার ওপরে পড়ে। কিন্তু পাতের গায়ে কোন ছিদ্র হয় না।
২। কিছু আলফা কণা পরমাণুতে ইলেকট্রন থাকার কারণে সামান্য কোণে ডানদিকে বা বামদিকে বেঁকে যায়।
৩। দুই-একটি আলফা কণা, প্রায় বিশ হাজারের মধ্যে একটি নিউক্লিয়াস থাকার কারণে, যে পথে যায় সেই পথে আবার ফিরে আসে।
এসব পর্যবেক্ষণ থেকে তিনি নিম্নোক্ত মডেল টি প্রদান করেন।
১। পরমাণুর কেন্দ্রস্থলে ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট একটি ভারী বস্তুকণা বিদ্যমান। আর এ ভারী বস্তুকণাকে পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস বলে।
২। পরমাণুর মোট আয়তনের তুলনায় নিউক্লিয়াসের আয়তন অত্যন্ত ছোট।
৩। পরমাণু সামগ্রিকভাবে চার্জ নিরপেক্ষ। অর্থাৎ পরমাণুর সামগ্রিক চার্জ শূন্য।
৪। সূর্যকে কেন্দ্র করে সৌরজগতের গ্রহগুলো যেমন ঘুরতে থাকে, তেমনি ঠিক একইভাবে পরমাণুর কেন্দ্রস্থলে
৫। ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট নিউক্লিয়াস ও ঋণাত্মক চার্জবিশিষ্ট ইলেকট্রনের মধ্যে একটি স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণ বল বিদ্যমান। এ আকর্ষণ বল ও ঘূর্ণনের ফলে তৈরি কেন্দ্রবিমুখী বল সমান। ফলে পরমাণুটি স্থিতিশীল হয় অবস্থিত নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে পরমাণুর ইলেকট্রনগুলো ঘুরতে থাকে।

চিত্র ২: রাদারফোর্ডের পরমাণুর মডেল

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা:
১। রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলে পরমাণুর নিউক্লিয়াস ও ইলেকট্রনকে যথাক্রমে সৌরজগতের সূর্য ও গ্রহের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু সৌরজগতের সূর্য ও গ্রহগুলো সাধারণ চার্জ নিরপেক্ষ। অন্যদিকে পরমাণুর নিউক্লিয়াস ও ইলেকট্রন চার্জ যুক্ত। তাই চার্জ হীন বস্তুর সঙ্গে চার্জ যুক্ত বস্তুর তুলনা করা ঠিক হয়নি।
২। রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলে ইলেকট্রনের কক্ষপথের আকার ও আকৃতি সম্পর্কে কোন ধারণা দেওয়া হয়নি। তেমনি এর কৌণিক ভরবেগ সম্পর্কেও কোন ধারণা পাওয়া যায় না।
৩। রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সাহায্যে পরমাণুর বর্ণালির কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।
৪। একাধিক ইলেকট্রন যুক্ত পরমাণুর ক্ষেত্রে ইলেকট্রন কিভাবে নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরবে তার ব্যাখ্যা রাদারফোর্ডের পরমাণুর মডেল দিতে পারেনি।
৫। ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব অনুসারে ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণনের সময় ক্রমাগত শক্তি হারাতে থাকবে। ফলে ইলেকট্রনের ঘূর্ণন পথও ছোট হতে থাকবে এবং এক সময় সেটি নিউক্লিয়াসের উপর পতিত হবে। অর্থাৎ পরমাণুর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে বা পরমাণু স্থায়ী হবে না। কিন্তু প্রকৃতিতে সেটা ঘটে না। অর্থাৎ ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব অনুসারে রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল সঠিক নয়।

বোর পরমাণু মডেল:
রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের ত্রুটিগুলোর দিকে খেয়াল রেখে ১৯১৩ সালে বিজ্ঞানী নিলস বোর একটি মডেল প্রদান করেন। এ মডেলকে বোর পরমাণু মডেল বলা হয়।
তিনি, এই মডেলে তিনটি মতামত দেন। এগুলো হলো-
১.শক্তিস্তর সম্পর্কিত মতবাদ:
পরমাণুতে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কক্ষপথে ঘুরতে থাকে। এই কক্ষপথগুলোকে শক্তিস্তর বলে। কক্ষপথে অবস্থানের সময় ইলেকট্রন কোন শক্তি শোষণ বা বিকিরণ করে না।
২. কৌণিক ভরবেগ সম্পর্কিত প্রস্তাব:
কোন নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগের মান নির্দিষ্ট যা h2π এর পূর্ণ সংখ্যার সরল গুণিতক।

যদি একটি ইলেকট্রনের ভর m, গতিবেগ v এবং বৃত্তাকার কক্ষপথের ব্যাসার্ধ r হয় তবে এর কৌণিক ভরবেগ হবে,
mvr= nh2π

m=ইলেকট্রনের ভর (9.11626×10-31kg)
r= ইলেকট্রন যে কক্ষপথ বা শক্তিস্তরে ঘুরবে তার ব্যাসার্ধ
v= ইলেকট্রন যে কক্ষপথ বা শক্তিস্তরে ঘুরবে সেই কক্ষপথে ইলেকট্রনের বেগ
h= প্লাংক ধ্রুবক (h=6.626×10-34m2 kg/ s)
n= প্রধান শক্তিস্তর বা প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা (n = 1, 2 , 3 ইত্যাদি)
৩.শক্তির শোষণ বা বিকিরণ মতবাদ:
ইলেকট্রন যখন শক্তির এক স্তর থেকে অন্য স্তরে যায় তখন শক্তির শোষণ বা বিকিরণ ঘটে। ইলেকট্রন নিম্ন শক্তিস্তর থেকে উচ্চ শক্তিস্তরে গেলে, শক্তির শোষণ ঘটে। আবার উচ্চ শক্তিস্তর থেকে নিম্ন শক্তিস্তরে গেলে শক্তির বিকিরণ ঘটে।

শোষিত বা বিকিরিত শক্তির পরিমাণ hν= hc
C= আলোর বেগ = (3×10-1ms-1)
v= শোষিত বা বিকিরিত শক্তির কম্পাঙ্ক (একক s-1 বা Hz)
a=হচ্ছে শোষিত বা বিকিরিত শক্তির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য (একক m)

বোর পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা:
বোর মডেলেরও কিছু সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়। সেগুলো হচ্ছে-
১। বোর মডেলের সাহায্যে এক ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণুর পারমাণবিক বর্ণালি ব্যাখ্যা করা যায় সত্যি কিন্তু একাধিক ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণুর পারমাণবিক বর্ণালি ব্যাখ্যা করা যায় না ।
২। বোর পারমাণবিক মডেল অনুসারে এক শক্তিস্তর থেকে ইলেকট্রন অন্য শক্তিস্তরে গমন করলে পারমাণবিক বর্ণালিতে একটিমাত্র রেখা পাওয়ার কথা। কিন্তু শক্তিশালী যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যায় প্রতিটি রেখা অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রেখার সমষ্টি। প্রতিটি রেখা কেন অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রেখার সমষ্টি হয় বোর মতবাদ অনুসারে তার ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।
৩। বোর পরমাণুর মডেল অনুসারে পরমাণুতে শুধু বৃত্তাকার কক্ষপথ বিদ্যমান। কিন্তু পরে প্রমাণিত হয়েছে পরমাণুতে ইলেকট্রন শুধু বৃত্তাকার কক্ষপথেই নয় উপবৃত্তাকার কক্ষপথেও ঘুরে।
এগুলোই হলো পরমাণুর মডেল যা পরমাণু গঠন সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা প্রদান করে থাকে।

শেয়ার:

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − 11 =