পরমানুর ভেতরের কণা

পরমাণুর ভেতরের কণা

প্রত্যেক বস্তুই পরমাণু দিয়ে গঠিত। চারপাশেই যাই দেখিনা কেন তা কোন না কোন পরমাণু নিয়েই গঠিত। তথ্য ও বিজ্ঞানের এই যুগে এটা সম্ভবত আমরা সবাই এখন জানি । যেটা দিয়ে শুরু করতে চাই সেটা হল এর ধারনা কোথা থেকে এসেছে? এর জন্য আমাদের একটু পেছনের সময় থেকে ঘুরে আসতে হবে। না অবশ্যই কোন টাইম মেশিন দিয়ে না বরং একটু ইতিহাস জানার মাধ্যমে ঘুরে আসার চেষ্টা করবো।

পরমাণুর ধারণার উৎপত্তি

প্রাচীন গ্রিক মতবাদ থেকেই পরমাণুর ধারনার উৎপত্তি। বিভিন্ন দার্শনিক ও গবেষকদের, বিভিন্ন ধরণের মতবাদ আছে। তবে ডেমোক্রিটাস এর মতবাদ ছিল সব পদার্থের ক্ষুদ্রতম একক আছে যা ‘অবিভাজ্য’। এ থেকেই মূলত পরমাণুর ধারণার সূত্রপাত হয় তবে জানলে অবাক হবে তার এই মতবাদ কিন্তু মূলত তার শিক্ষক ‘লুসিপাস’ এর ধারণা থেকেই এসেছে। তাই বলা চলে ‘লুসিপাস’ এবং ডেমোক্রিটাসই সর্বপ্রথম পরমাণুর ধারণা দেন। তবে জানো তো? বিজ্ঞানীরা সবসময় ই সব কিছুর প্রমাণ খোজার চেষ্টা করেন। ১৮০৩ সালে বিজ্ঞানী ‘জন ডাল্টন’ বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের মাধ্যমে বলেন ‘সব পদার্থই যে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সমন্বয়ে গঠিত সেই কণাগুলোকে পরমাণু বলে এবং এগুলোকে আর ভাঙ্গা যায় না’। তাই একে গ্রিক শব্দ এটম নাম দেওয়া হয় যার শাব্দিক প্রতিশব্দ ‘অবিভাজ্য’।

পরমাণুর কণার ধারণা

বিজ্ঞান এর জগতের মজা হল কোন বিষয়ে জ্ঞান এর পরিধি যত বাড়তে থাকে তার ধারণা ততো স্পষ্ট হতে থাকে আর এর সাথে সাথে পরিবর্তন হতে থাকে। আর তাই বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে, ১৯১১ সালে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড তার আলফা কণা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, পরমাণুকে ভাগ করা যায় যা পরমাণু সম্পর্কে নতুন এবং স্পষ্ট ধারণা দেয়। এথেকে প্রমাণ পাওয়া যায় পরমাণু পুরোপুরি অবিভাজ্য নয়। একটি পরমাণু মূলত স্থায়ী ও অস্থায়ী মূল কণিকা দিয়ে গঠিত।

স্থায়ী মূল কণিকা

যে সকল কণিকা সব মৌলের পরমাণুতে স্থায়ী ভাবে থাকে, তাকে স্থায়ী মূল কণিকা বলে। স্থায়ী মূলকণিকা মূলত ৩ টি।

  • ইলেকট্রন
  • প্রোটন
  • নিউট্রন

ইলেকট্রন: বিজ্ঞানী জন জোসেফ থমসন প্রথম ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন ১৮৯৭ সালে। এটি একটি মৌলিক কণিকা এবং এটি আবিষ্কারের মাধ্যমেই বিজ্ঞানী থমসন পরিক্ষিত ভাবে প্রমাণ করেন যে পরমাণুই পদার্থের মৌলিক অংশ নয়।

প্রতীক

একে e প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

চার্জ:

এটি একটি নেগেটিভ চার্জ যুক্ত কণিকা। এর চার্জ এর পরিমাণ -1.6 10-19 কুলম্ব

ভর

একটি ইলেকট্রনের ভর 9.1110-28 g। ইলেকট্রনের আপেক্ষিক আধান -1 ধরা হয় এবং এর ভর প্রোটন ও নিউট্রনের তুলনায় ১৮৪০ গুন কম হয়। একারণেই এর আপেক্ষিক ভর শূন্য ধরা হয়।

পরমাণুতে এর অবস্থান

প্রোটন: প্রোটন আবিষ্কৃত হয় বিজ্ঞানী আরনেসট রাদারফোর্ড এর Gold foil experiment এর মাধ্যমে ১৯১৯ সালে। এটি এমন একটি মূল কণিকা যার সংখ্যা দ্বারা আমরা পরমাণু সংখ্যা পেয়ে থাকি। এই পারমাণবিক সংখ্যা দ্বারাই

প্রতীক

একে p প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

চার্জ:

এটি একটি positive চার্জ যুক্ত কণিকা। এর চার্জ এর পরিমাণ +1.6 10-19 কুলম্ব।

ভর

একটি প্রোটনের ভর 1.6 10-24 g। প্রোটনের আপেক্ষিক আধান +1 এবং আপেক্ষিক ভর 1 ধরা হয়।

পরমাণুতে এর অবস্থান

রাদারফোর্ড পরীক্ষার মাধ্যমে দেখান যে প্রোটন পরমাণুর কেন্দ্রে নিউক্লিয়াসে অবস্থান করে।

নিউট্রন:

নিউট্রন এমন একটি মূল কণিকা যার অস্তিত্ব আছে এই ধারণা দেন বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড ১৯২০ সালে এবং এর পর বিজ্ঞানী চ্যাডউইক ১৯৩২ সালে এটি আবিষ্কার করেন। হাইড্রোজেন ছাড়া সব মৌলের পরমাণুতেই এটি রয়েছে।

প্রতীক

একে n প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

চার্জ:

এই মূল কণিকাটি কিন্তু চার্জ নিরপেক্ষ হয়ে থাকে।

ভর

এর ভর প্রোটনের ভর 1.6 10-24 g এর চেয়ে সামান্য বেশি হয়ে থাকে। নিউট্রনের আপেক্ষিক আধান 0 এবং আপেক্ষিক ভর 1 ধরা হয়।

এগুলো ছাড়াও আরও কিছু অস্থায়ী কণিকা আছে পরমাণুর। যেমন পজিট্রন, মেসন, বোসন, পাইওন, মিউওন, পজিট্রিনো ইত্যাদি

পরমাণুর ও এর মূল কণিকার ধারণা রসায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচনা। রসায়ন বুঝতে শেখার শুরুতেই আসলে পরমাণু সম্পর্কে শেখা শুরু হয়। তাই এই রসায়ন শিখতে হলে শিক্ষার্থীর উচিৎ এটি সম্পর্কে স্বচ্ছ এবং সঠিক জ্ঞান রাখা। 

শেয়ার:

Similar Posts

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × one =